জ্বর বা সর্দি হলে আইসক্রিম খাওয়া কি ক্ষতিকর

জ্বর হলে আমাদের দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে আমার ছোট বোনের জ্বর হয়েছিল। ওর বয়স ৮ বছর। আইসক্রিম খেতে খুব পছন্দ করে। তো জ্বর হওয়া অবস্থায় ওর আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করল। মাকে জানাল সেই আবদার। কিন্তু ওর আবদার শুনে মা তো রেগে আগুন। মেয়ে বলে কি! জ্বরের মধ্যে নাকি আইসক্রিম খাবে। মা বকা দিয়ে বলল, জ্বরের মধ্যে ঠান্ডা কিছু খাওয়া যাবে না। তাতে নাকি জ্বর আরও বাড়বে। এমনকি নিউমোনিয়াও হয়ে যেতে পারে। বেচারা তাই আর আইসক্রিম খাওয়ার নাম নিল না। তখন আমার মাথায় চট করে একটা প্রশ্ন এল। আসলে কি জ্বরের মধ্যে আইসক্রিম খেলে আরও বেশি ক্ষতি হয়? একটু গুগল করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেলাম। মানে ভালো-মন্দ দুই ধরনের উত্তরই পেলাম। একটু অবাকই হলাম এমন উত্তর পেয়ে। কারণ, কোথায় সরাসরি লেখা নেই, জ্বরের মধ্যে আইসক্রিম খাওয়া ক্ষতিকর। তাই ভাবলাম, বিষয়টা তোমাদের সঙ্গেও একটু শেয়ার করি।

আইসক্রিম খেলে যে সর্দি-কাশি বেড়ে যায়, এটা একটা মিথ বা ভুল ধারণা। তবে সত্যিটা কি, তা জানার আগে জেনে নিই, জ্বর কেন হয়? সর্দি বা জ্বর কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়া বা ঠান্ডা খাবার খাওয়ার জন্য হয় না। এর জন্য দায়ী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া। যখন কোনো ভাইরাস আমাদের শরীরে আক্রমণ করে, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই যুদ্ধের কারণেই আমাদের শরীর গরম হয়ে ওঠে। একে আমরা বলি জ্বর। নাক দিয়ে পানি পড়া বা গলা ব্যথাও এই যুদ্ধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সুতরাং, আইসক্রিম নিজে কোনো ভাইরাস বহন করে না। তাই আইসক্রিম খেলে তোমার শরীরে নতুন করে কোনো জীবাণু ঢুকবে না।

আরও পড়ুন

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। তাহলে কি জ্বরের মধ্যে আইসক্রিম খাওয়া যাবে? এটাও তোমার শরীরের ওপরই নির্ভর করে। অনেকের ধারণা, আইসক্রিম খেলে কফ বেড়ে যায়। এই ধারণাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। গবেষণা বলছে, আইসক্রিমে থাকা দুধ বা দুগ্ধজাতীয় পদার্থ নতুন করে কফ তৈরি করে না। তবে হ্যাঁ, এটি আমাদের মুখের লালার সঙ্গে মিশে আগে থেকেই জমে থাকা কফকে কিছুটা ঘন করে তুলতে পারে। ফলে তোমার মনে হতেই পারে, কফ বা সর্দি হয়তো বেড়ে গেছে। কিন্তু এই অনুভূতিটা সাময়িক। কিছুক্ষণ পরেই তা ঠিক হয়ে যায়।

জ্বর হলেও মাঝেমধ্যে আইসক্রিম খাওয়া যেতেই পারে
মডেল আফরাহ্‌, ছবি: সুমন ইউসুফ

সর্দি বা কাশির সঙ্গে যদি গলা ব্যথা থাকে, তাহলে আইসক্রিম বরং কিছুটা উপকার করতে পারে। কারণ, আইসক্রিমের ঠান্ডা ভাব গলার ভেতরের রক্তনালিকে সাময়িকভাবে সংকুচিত করে এবং ব্যথা কমায়। ফলে গলা ব্যথায় বেশ আরাম পাওয়া যায়। ব্যথা পেলে যেমন আমরা বরফের সেঁক দিই, ঠিক সেরকম ব্যাপার।

আরও পড়ুন

আবার জ্বর হলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তাই ডাক্তাররা বেশি করে পানি ও তরল খাবার খেতে বলেন। আইসক্রিম এক্ষেত্রে তোমার শরীরে কিছুটা পানির জোগান দিতে পারে। জ্বর হলে কিন্তু আমাদের খাওয়ার রুচিও কমে যায়। কিন্তু জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের প্রচুর শক্তি বা ক্যালোরির প্রয়োজন। আইসক্রিমে ভালোই ক্যালোরি থাকে। তাই মুখে যদি অন্য কিছু না রোচে, তাহলে সামান্য আইসক্রিম খেতেও পারো।

তাহলে কি জ্বর হলেই আইসক্রিম খাবে? আসলে সবকিছুরই ভালো-মন্দ দিক থাকে। আইসক্রিমের ক্ষেত্রেও তাই। যদিও আইসক্রিম তোমার সর্দি বা জ্বরের কারণ নয়, তবুও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা ভালো। আইসক্রিমে প্রচুর চিনি থাকে। অতিরিক্ত চিনি সাময়িকভাবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা দুর্বল করে দিতে পারে। তাই অসুস্থ অবস্থায় খুব বেশি আইসক্রিম না খাওয়াই ভালো। আর যদি আইসক্রিম খেতেই চাও, তাহলে ফ্রিজ থেকে বের করেই খেয়ো না। একটু রেখে দাও। আইসক্রিমটা যখন গলতে শুরু করবে, তখন খাও। আর একসঙ্গে কিন্তু বেশি আইসক্রিম খেয়ো না।

আরও পড়ুন

আরেকটা জরুরি বিষয় হলো, নিজের শরীরকে বোঝা। যদি তোমার মনে হয় আইসক্রিম খাওয়ার পর তোমার কাশি বাড়ছে বা অস্বস্তি হচ্ছে, তাহলে না খাওয়াই ভালো। পাশাপাশি, বেশি খারাপ লাগলে গরম পানি দিয়ে একটু কুলকুচি করতে পারো। কারণ, একেকজনের শরীর একেক রকম। জ্বরের সময় তুমি আইসক্রিম খেলে হয়তো ভালোই লাগবে, কিন্তু তোমার ভাই বা বোনের ভালো নাও লাগতে পারে।

মোদ্দাকথা, জ্বর বা সর্দি হলে আইসক্রিম খাওয়া কোনো বড় অপরাধ নয়। এটি তোমার অসুস্থতা বাড়াবে না, বরং গলা ব্যথায় কিছুটা আরাম দিতে পারে। তবে একে ওষুধ হিসেবে ভেবে নিলেও ভুল হবে। বরং অসুস্থ হলে বিশ্রাম নাও, প্রচুর তরলজাতীয় খাবার খাও। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাও।

আর জ্বর বা সর্দি থাকা অবস্থায় আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করলে ভয়ে গুটিয়ে থাকার দরকার নেই। পরিমিত পরিমাণে খেতেই পারো। তবে হ্যাঁ, মায়ের কথাটাও একেবারে ফেলে দিও না। হয়তো তিনি বিজ্ঞানের সবটা জানেন না, কিন্তু তোমার জন্য তাঁর ভালোবাসা আর চিন্তাটা তো খাঁটি! তাই তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া না করে বুঝিয়ে বলো।

সূত্র: হেলথলাইন, অলরেসিপি ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

আরও পড়ুন