বিদায় নেওয়ার সময় মানুষ কেন টাটা বলে, রতন টাটার সঙ্গে এর সম্পর্ক কী
৯ অক্টোবর ২০২৪ মারা যান ভারতীয় শিল্পপতি রতন টাটা। তাঁকে নিয়ে কিশোর আলোতে একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল, ‘রতন টাটার মৃত্যুতে তাঁর কুকুর কেন খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে?’
কেউ মারা গেলে আমরা যেভাবে বুঝতে পারি, তিনি আর ফিরে আসবেন না, কুকুর বিষয়টি সেভাবে বুঝতে পারে না। কুকুর অনুপস্থিত লোকটির জন্য অপেক্ষা করে। মনে করে, তিনি বাইরে আছেন, ফিরে আসবেন। কুকুরের প্রতিদিনের কার্যক্রমে ওই মানুষটির ভূমিকা থাকে। তিনি হয়তো কুকুরটিকে খাওয়ান, যত্ন নেন। কুকুরটি তাঁর ওপর নির্ভর করে। মানুষটি মারা গেলে তাঁর অনুপস্থিতি কুকুরের প্রতিদিনের নিয়মে ব্যাঘাত ঘটে। কুকুর নিজের নিয়মে ফিরে যেতে চায়। তাই লোকটির জন্য অপেক্ষা করে। তখন আমরা মনে করি, লোকটি মরে যাওয়ায় প্রাণীটি শোক করছে। রতন টাটার ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে।
রতন টাটার মৃত্যুর সঙ্গে আসলে টাটা শব্দ দিয়ে বিদায় জানানোর তেমন সম্পর্ক নেই। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা রতন টাটার মৃত্যুর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক ব্যবসার বিদায় নিয়ে লেখালেখি হয়েছিল। রতন টাটার সঙ্গে বিদায়ের সম্পর্ক এতটুকুই। রতন টাটার পারিবারিক নাম ‘টাটা’। এর সঙ্গে বিদায়সূচক 'টাটা' শব্দের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। টাটা নামটি ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক পরিচয় বহন করে। ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে টাটা জনপ্রিয় নাম। আমাদের দেশে রাস্তায় চলাচল করা গাড়ির অনেকগুলোই টাটা ব্র্যান্ডের। টাটা গোষ্ঠীর বহু পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঘরে ঘরে ব্যবহার হয়। এর পেছনে ছিলেন রতন টাটা।
বিদায় জানানোর ভাষা হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে ‘টাটা’ শব্দটা বেশ জনপ্রিয়। প্রশ্ন হলো, আমরা কেন ‘টাটা’ ব্যবহার করি? আমরা বিদায় জানানোর সময় যে ‘টাটা’ শব্দটি ব্যবহার করি, তা মূলত ব্রিটিশ ইংরেজি ভাষা থেকে এসেছে। এটি আনুষ্ঠানিক ‘গুডবাই’ বা ‘ফেয়ারওয়েল’-এর বিকল্প। উনিশ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে এই শব্দ প্রচলিত হয়। শব্দটি মূলত ব্রিটিশ ককনি উপভাষা বা আঞ্চলিক ঘরোয়া ইংরেজি থেকে এসেছে। প্রিয়জনকে যেভাবে বিদায় দিই, যেখানে আনুষ্ঠানিকতা কম থাকে, সেখানে আমরা টাটা শব্দ ব্যবহার করি। শব্দটি খানিকটা বন্ধুত্বপূর্ণ, খানিকটা কম আনুষ্ঠানিক।
এই শব্দ দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ, শিশুরা খুব সহজে এটি বলতে পারে। মা-বাবা যখন শিশুকে নিয়ে কাউকে বিদায় জানানোর জন্য আসেন, তখন তাঁরা যদি বলেন, বিদায়, ভালো থাকবেন, আবার আসবেন। তখন ভাষা শেখেনি, এমন শিশুরা কথাগুলো বলতে পারে না বা বিদায় জানাতে পারে না। তবে তারা আধো আধো শব্দে তাতা বা টাটা বলতে পারে। তারা তাতা বললে মা–বাবা বলেন, বাবা বলো, ‘টাটা’। এতে নরম করে বিদায় জানানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি শিশুর ভাষা শেখাও সহজ হয়। ভাষা অনুশীলন করা হয়।
এ ছাড়া শিশুরা যখন হাত নেড়ে বিদায় জানায়, তখন এই ধ্বনি অনেক সময় একা একা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। কিছু ভাষায় টাটা শব্দের অর্থ বাবা। বাবা যখন সকালে কাজে বের হন, শিশুরা তখন বাবাকে বিদায় জানাতে হাত নাড়ে আর বলে, টাটা। মানে বাবা। এভাবেই এই শব্দটি কিছু অঞ্চলে প্রচলিত শব্দ হয়ে উঠেছে। শিশুদের থেকে বিদায় নেওয়ার সময় সন্তানকে বাবা বলেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রেও টাটা শব্দটি ব্যবহার করেন বাবারা। এভাবে শিশুর সঙ্গে কথা বলার সময় বা বিদায়ের সময় এই শব্দের ব্যবহার শুরু হয়।
ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রভাবে ভারতসহ অন্য কমনওয়েলথ দেশগুলোতে এই শব্দ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে এটি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিদায় জানাতে এই শব্দ খুব কাছের মানুষ হওয়ার অনুভূতি দেয়।
আনুষ্ঠানিক পরিবেশে আমরা সাধারণত বাংলায় ‘বিদায়’ শব্দটি ব্যবহার করি। অনেকে ইংরেজিতে ‘গুডবাই’, ‘ফেয়ারওয়েল’ অথবা ‘টেক কেয়ার’ ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সভা শেষে এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়। এভাবে বিদায় জানিয়ে সম্মান জানানো আর পেশাদারত্ব বজায় থাকে। অন্যদিকে, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা পরিচিতদের সঙ্গে বিদায়ের জন্য আমরা বাংলায় ‘আসি’, ‘দেখা হবে’। ইংরেজিতে টাটার পাশাপাশি ‘বাই’, ‘সি ইউ লেটার’, ‘হ্যাভ আ গুড ডে’ ব্যবহার করি।
‘টাটা’ শব্দটা উচ্চারণ করা বেশ সহজ। শব্দটা কানে শুনতে বেশ ভালো লাগে। তাই বিদায়কে সহজ, হালকা আর বন্ধুত্বপূর্ণ করার জন্যই মূলত আমরা টাটা বলি। তুমি চাইলে অন্য কিছু বলেও বিদায় নিতে পারো।
সূত্র: কিশোর আলো, রবার্ট ক্লেমেন্টসের ব্লগ