নারী বিশ্বকাপে সুযোগ পেতে হলে কী করতে হবে বাংলাদেশকে?

ঋতুপর্ণা–মনিকাদের এই উচ্ছ্বাস মিয়ানমারকে ২–১ গোলে হারানোর। পরে এ আনন্দ রূপ নিয়েছে প্রথমবার নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করার উৎসবেও।বাফুফে

ইতিহাস গড়ে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এক মাসও হয়নি সেই সুখস্মৃতির। ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে রীতিমতো বদলে গিয়েছে বাংলাদেশ নারী দলের চিত্র। আগের দুই বাছাইপর্বে যেখানে একটা ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ, সেখানে তিন ম্যাচ জিতে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাঘিনীরা। বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘সি’তে তিন ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করেছে ১৬টি এবং হজম করেছে মাত্র ১ গোল। রীতিমতো প্রতিপক্ষকে তুলোধুনো করে এশিয়ান কাপের টিকিট কেটেছেন ঋতুপর্ণা-তহুরারা। 

এরপর থেকেই আশায় বুক বেধে ছিল পুরো বাংলাদেশের খেলাপ্রেমীরা, এশিয়ার সবচেয়ে বড় মঞ্চে বাঘিনীদের প্রতিপক্ষ হবে কারা? এশিয়ান কাপে সুযোগই পায় হাতে গোনা ১২টি দল। আর তাদের মধ্যে বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে আছে সকলেই। এগিয়ে আছে বললে ভুল হবে, একেবারে যোজন যোজন এগিয়ে আছে বাকি দেশগুলো। সুযোগ পাওয়া দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই আছে, যারা র‍্যাঙ্কিংয়ে এক শর বাইরে। তাই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা হয় সে নিয়ে একটা চিন্তা-ভাবনা ছিল। কারণ এশিয়ান কাপের পারফরম্যান্সের ওপর ভর করেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেন ঋতুপর্ণারা। আর সেই ড্র হয়ে গেল আজ। 

আরও পড়ুন
ঋতুপর্ণা, মারিয়া মান্দা ও তহুরা। এশিয়ান কাপের পারফরম্যান্সের ওপর ভর করেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেন ঋতুপর্ণারা।
বাফুফের ফেসবুক পেজ

সিডনির টাউন হলে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হয়ে গেল গ্রুপ পর্বের ড্র। অংশগ্রহণকারী সব দেশের অধিনায়ক ও কোচকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এএফসি। কিন্তু ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া বাংলাদেশের কেউ ছিলেন না ড্র অনুষ্ঠানে। ১২ দলকে ভাগ করা হয়েছিল ৪টি পটে। আর চারটি পট নির্ধারণ করা হয়েছিল দলগুলোর র‍্যাংকিংয়ের ওপর ভিত্তি করে। শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া বাদে। স্বাগতিক হওয়ার তারা চতুর্থ অবস্থানে থেকেও সুযোগ পেয়েছে পট ‘এ’ থেকে। যে কারণে র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে থেকেও পট ‘বি’তে সুযোগ হয়েছে চীনের। স্বাভাবিকভাবেই ১২৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ ছিল একেবারে তলানিতে। বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়ান কাপ খেলবে ‘বি’ গ্রুপে থেকে। গ্রুপে থাকা বাকি তিন দল হলো উত্তর কোরিয়া, চীন ও উজবেকিস্তান। এশিয়ার মঞ্চে তিন দলের অবস্থান কেমন?

পট ‘এ’ থেকে বাংলাদেশের গ্রুপে আছে উত্তর কোরিয়া। ফিফা র‍্যাংকিংয়ের ৯ নম্বরে থাকা উত্তর কোরিয়া এশিয়ান কাপের দ্বিতীয় সেরা দল। মোট ৩ বারের শিরোপাধারী তারা। যদিও তাদের শিরোপাগুলো এসেছে এই শতাব্দীর গোড়ার দিকে। তাই বলে মাঠের শক্তিতে তারা বিন্দুমাত্র কম যায় না। এবারও শিরোপার দিকে কড়া নজর তাদের। 

আরও পড়ুন

প্রশ্ন করতে পারো, দ্বিতীয় সেরা উত্তর কোরিয়া হলে সেরা কে? চিন্তা নেই, সেরা দলটার মুখোমুখিও হতে হবে বাঘিনীদের। পট ‘বি’ থেকে বাংলাদেশের গ্রুপে সুযোগ পেয়েছে চীন। ৯ বারের এশিয়ান কাপজয়ী চীন টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও বটে। ফিফা র‍্যাংকিংয়ে আছে ১৫ তম অবস্থানে। অস্ট্রেলিয়া স্বাগতিক হিসেবে পট ‘এ’ তে সুযোগ না পেলে চীনই থাকত সে জায়গায়। তখন হয়তো অন্য কোনো দল সুযোগ পেত এই গ্রুপে। 

গ্রুপের তৃতীয় দলটি তুলনামূলক সহজই বটে। অন্তত বাকি দুই দলের তুলনায়। উজবেকিস্তান কখনও গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোয়নি। বরং পাঁচবার অংশ নিয়ে পাঁচবারই শেষ করেছে গ্রুপ পর্ব থেকে। ২০০৩ সালের পর আবারও এশিয়ান কাপে সুযোগ পেয়েছে তারা। 

এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের আশা কতখানি? বিশ্বকাপে সুযোগ পেতে হলেও বা কী করতে হবে? এশিয়ান কাপের ১২ দল থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে সুযোগ পাবে ৮ দল। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল সুযোগ পাবে সরাসরি। আর পয়েন্টের ভিত্তিতে তিন গ্রুপের তৃতীয় স্থানে থাকা শীর্ষ দুই দল যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। 

আরও পড়ুন

অর্থাৎ বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পেতে হলে ‘বি’ গ্রুপের সেরা তিনে থাকতে হবেই। যদি শীর্ষ দুইয়ে থাকলে সরাসরি মিলবে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। আর নইলে তাকিয়ে থাকতে হবে বাকি দুই গ্রুপের সেরা তৃতীয় দলের দিকে। সেখান থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে সেরা দুইয়ে থাকা দুই দল জায়গা করে নিবে কোয়ার্টার ফাইনালে। 

এখান থেকেই কিন্তু নিশ্চিত হয়ে যাবে কারা পাবে ২০২৭ ব্রাজিল বিশ্বকাপ এবং ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকের টিকিট। গ্রুপ পর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে অর্থাৎ শীর্ষ আটে থাকলেই মিলবে বিশ্বকাপের টিকিট। সেরা ছয় দল সুযোগ পাবে সরাসরি, আর বাকি দুই দলকে খেলতে হবে ইন্টার-কনফেডারেশন প্লে-অফ। 

বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আছে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করার। কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে যারা সেমিতে যাবে, তারা সরাসরি সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে। আর যদি কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেও যায়, তাহলেও থাকবে আরেকটি সুযোগ। কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে পরাজিত চারটি দল। সেখান থেকে জয়ী দুই দল সরাসরি সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে। আর বাকি দুই দলকে খেলতে হবে বাছাইপর্ব। 

আরও পড়ুন

অন্যদিকে কোয়ার্টার ফাইনালে সুযোগ পেলে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকের বাছাইপর্বেও জায়গা করে নিতে পারবে বাংলাদেশ। কোয়ার্টারে সুযোগ পাওয়া আট দলকে দুই গ্রুপে ভাগ করে রাউন্ড-রবিন ভিত্তিতে হবে খেলা। দুই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দুই দল সুযোগ পাবে অলিম্পিকের মূল পর্বে।

২০২৬ সালের ১ থেকে ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ ভেনুতে হবে এশিয়ান কাপের ২১তম আসর। ৩ মার্চ থেকে শুরু হবে বাংলাদেশের ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি স্টেডিয়ামে হবে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো। মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশ কেমন করে তা দেখার অপেক্ষায় পুরো বাংলাদেশ। 

এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ: 

৩ মার্চ: বাংলাদেশ বনাম চীন

৬ মার্চ: বাংলাদেশ বনাম উত্তর কোরিয়া

৯ মার্চ: বাংলাদেশ বনাম উজবেকিস্তান

আরও পড়ুন