সবাই কেন রোব্লক্স খেলে
আজকের দিনে ভিডিও গেমের জগতে যদি কোনো একটি প্ল্যাটফর্মকে বিশাল এক ‘ভার্চ্যুয়াল খেলার মাঠ’ বলা হয়, তবে নিঃসন্দেহে সেটা রোব্লক্স (Roblox)। ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। কিন্তু কেন? সবার কাছে এটি কি শুধু একটি গেম নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু? বেশির ভাগ ভিডিও গেমের থাকে কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম। নিয়মগুলোর মধ্যেই সীমিত থাকে গেমগুলো। কিন্তু রোব্লক্সের জগৎটা একদম আলাদা। কারণ, এর দুনিয়ার যেন কোনো শেষ নেই।
রোব্লক্সকে তুমি বলতে পারো অনলাইন গেমের এক বিশাল ‘সুপারমল’। এটা শুধু একটা গেম নয়। এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তুমি শুধু গেম খেলবে তা নয়, এখানে তুমি নিজেই গেম বানাতেও পারবে।
রোব্লক্সের জগৎ তোমার কল্পনার মতো, যার কোনো সীমা নেই। এখানে যে শুধু নিজের কল্পনা ও আইডিয়াগুলোকেই বাস্তবে দেখতে পাবে, এমনটা না। সারা বিশ্বের সবার সৃষ্টিও দেখতে পাবে। সেটা রেসিং ট্র্যাক, রোল-প্লেয়িং কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য একটা ভার্চ্যুয়াল টাউন তৈরি করা—যেটাই হোক, তুমি সেসবই এখানে তৈরি করে ফেলতে পারবে। আর এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিনই নতুন নতুন মজার গেম আসে। ফলে একঘেয়ে হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, রোব্লক্সের অধিকাংশ গেম খেলতে কোনো টাকা লাগে না। এসব দারুণ গেম তৈরি করেছে কে জানো? তোমার-আমার মতোই সাধারণ ব্যবহারকারী বা শখের ডেভেলপাররা। তাই স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারে যারা নতুন কিছু খেলতে চায়, তাদের কাছে এটি খুবই প্রিয়। খেলার পাশাপাশি, সেখানে টেক্সট চ্যাটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়।
রোব্লক্স প্ল্যাটফর্মের চরিত্র বা অ্যাভাটার ‘ব্লকি’ (Blocky), যা অনেকটা লেগো (Lego) ব্লকের কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে সময়ের সঙ্গে রোব্লক্স চরিত্রের ধরনে পরিবর্তন এনেছে। মূলত দুই ধরনের অ্যাভাটার এখানে দেখা যায়। একটি ক্ল্যাসিক রোব্লক্স অ্যাভাটার। অন্যটি আধুনিক অ্যাভাটার (Rthro Style)। খেলোয়াড়েরা মাথায় কী পরবে, কী রঙের পোশাক বা শরীর হবে—সবকিছুই নিজের পছন্দমতো পাল্টে নিতে পারবে। প্রতি মাসে ৩৮ কোটির বেশি মানুষ একবার হলেও রোব্লক্স ব্যবহার করছে। গেমটির দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৩ লাখের বেশি।
এখন রোব্লক্সের সেরা গেমগুলোর কথা বলি। প্রথম দিকেই আছে ‘ব্রুকহেভেন’। যেখানে একটা ভার্চ্যুয়াল শহরের মধ্যে নিজের পছন্দমতো চরিত্র সেজে ভূমিকা রাখতে হয়। সবার প্রিয় একটা গেম ‘অ্যাডাপ্ট মি!’। যেখানে ভার্চ্যুয়াল পোষা প্রাণী দত্তক নিয়ে তাদের দেখাশোনা করতে হয়। এ ছাড়া এই সপ্তাহে খুব জনপ্রিয় হয়েছে, এমন গেমগুলোর মধ্যে আছে ‘ব্লক্স ফ্রুটস’। যেখানে তলোয়ার নিয়ে সুপারহিরোর মতো লড়াই করতে হয়। ফ্যাশন ও ড্রেসআপের গেম ‘ড্রেস টু ইমপ্রেস’ এবং মজার মাছ ধরার গেম ‘ফিশ’ এখন সবাই খেলে। মানে এখানে সব ধরনের গেমই আছে।
রোব্লক্স কিন্তু ইলেকট্রনিক আর্টস বা অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডের মতো বড় বড় গেমিং কোম্পানির বানানো গেমের ওপর একদমই ভরসা করে না। গেম তৈরির জন্য তারা নির্ভর করে তোমাদের মতো সাধারণ ব্যবহারকারীদের ওপর। তাদের একটা দারুণ টুলস আছে, যার নাম রোব্লক্স স্টুডিও (Roblox Studio)। এটা ব্যবহার করে তুমি বা তোমার বন্ধুরা খুব সহজেই নিজেদের পছন্দের গেম বানিয়ে ফেলতে পারো। আর তোমার তৈরি করা গেমটি যদি জনপ্রিয় হয়, তাহলে সেই লাভের একটা অংশও তুমি পেতে পারো।
আগে গেম বানাতে গেলে কিন্তু কঠিন প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা জরুরি ছিল। কিন্তু এখন রোব্লক্স স্টুডিওর মতো সফটওয়্যার আসার কারণে গেম তৈরি করাটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। তুমি যদি কোডিং না–ও জানো, তবু এখানে তুমি তোমার স্বপ্নের গেম বানিয়ে ফেলতে পারো।
রোব্লক্স মূলত ছোটদের জন্য তৈরি হয়েছে। তাই এই প্ল্যাটফর্মটির একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বাবা-মায়েদের জন্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা (Parental Control) নিশ্চিত করা। এর ফলে অভিভাবকেরা সহজেই তাঁদের সন্তানের খেলার সময়, খরচ ও অন্যান্য কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ ও তদারক করতে পারেন।
যদিও প্ল্যাটফর্মে অনেক মজার গেম আছে। তবু অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া বা গেমিং প্ল্যাটফর্মের মতো, কিছু খারাপ মানুষ রোব্লক্সকেও খারাপ কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। এরা অনেক সময় প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তার নিয়ম বা মানুষকে নজরদারির জন্য রাখা সুরক্ষাব্যবস্থাকেও এড়িয়ে যায়। রোব্লক্সের কাছে ইউজারদের সুরক্ষা সবার আগে। তাই তারা নিরাপত্তা বজায় রাখতে সব সময়ই চেষ্টা করে। তাই খেলার সময় নিজেদেরও একটু সচেতন থাকতে হবে।