এবার এশিয়া কাপে ভাগ্য ফিরবে কি

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বারবার কোন শিরোপা এসে হানা দিয়েছে বলতে পারবে? কোনো সন্দেহ ছাড়াই উত্তরটা হবে এশিয়া কাপ। এশিয়া কাপ নিয়ে বাংলাদেশের আশা প্রতিবারই থাকে আকাশচুম্বী। যে টুর্নামেন্ট দিয়ে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব ক্রিকেটে পা দেওয়া, যে টুর্নামেন্টের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এত এত সুন্দর স্মৃতি, সেই টুর্নামেন্টই দিন শেষে কাঁদিয়েছে বাংলার মানুষকে বারবার। ২০২৫ সালে এসে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে কি?

আসন্ন বিশ্বকাপের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় এশিয়া কাপের ফরম্যাটও। ২০২৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে আয়োজন করতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দশম আসর। যে কারণে এবারের এশিয়া কাপও হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। তবে শুরুর আগেই বরাবরের মতো এক দফা ঝামেলা নিয়ে প্রস্তুত ছিল এশিয়া কাপ।

শিডিউল অনুযায়ী এশিয়া কাপ আয়োজনের কথা ছিল এই বছরের জুনে, ভেন্যু ছিল ভারত। কিন্তু এর আগেই বাড়তে থাকল রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারত–পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থা। ফলাফল? এশিয়া কাপে শুরুতে দল অনিশ্চিত, এরপর ভেন্যু। যত কিছুই হোক না কেন, ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের কড়কড়ে টাকার লোভ ছাড়তে পারে না কেউই। তাই তো যতই ওপরে ওপরে লড়াই চলুক না কেন, ম্যাচ হতেই হবে। তাই তো টুর্নামেন্ট উড়ে গেল সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বদলে যাওয়া সময়ে টুর্নামেন্ট চলবে ৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরে।

আরও পড়ুন

এবারের এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে ৮ দল। এশিয়া কাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলের অংশগ্রহণ হচ্ছে এবার। সরাসরি সুযোগ পেয়েছে টেস্ট খেলা পাঁচ দল, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা। আর বাকি তিন দল এসেছে বাছাইপর্ব খেলে। গত বছর এপ্রিলে ওমানে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব ‘এসিসি প্রিমিয়ার কাপ’। সেখানে অংশ নিয়েছিল ১০ দল। প্রিমিয়ার কাপের ফাইনালিস্ট দুই দল ওমান আর সংযুক্ত আরব আমিরাতও যোগ দেয় এশিয়া কাপে। আর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেপালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শেষ জায়গাটি করে নেয় হংকং। এবারই প্রথম এশিয়া কাপের মঞ্চে দেখা যাবে ওমানকে।

আট দলকে ভাগ করা হয়েছে দুটি গ্রুপে। প্রথমে রাউন্ড রবিন, এরপর দুই গ্রুপের শীর্ষ দুই দল, মোট চার দল আবারও মুখোমুখি হবে একে অপরের। অতঃপর সেখান থেকে শীর্ষ দুই দল যাবে ফাইনালে।

এশিয়া কাপ নিয়ে তো অনেক জানা হলো, এবার আসা যাক নিজেদের দেশের কথায়। বরাবরের মতো বিশাল স্বপ্ন আর এক বুক আশা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পা দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এবার কি টাইগারদের আশা পূরণ হবে? নাকি আগের মতোই ঘুরপাক খাবে হারের বৃত্তে?

শুরু করা যাক বাংলাদেশের ফিকশ্চার দিয়ে। বাংলাদেশের খেলা এমন তিন দলের বিপক্ষে যাদের সঙ্গে আনন্দের চেয়ে দুঃখের স্মৃতিই বেশি। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে ভালো করতে হবে অধিনায়ক লিটন দাস ছন্দে থাকা প্রয়োজন

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হংকংয়ের সঙ্গে। অনেক আগে থেকে যারা ক্রিকেট খেলা দেখো, তাদের নিশ্চয় মনে আছে হংকং ট্র্যাজেডির কথা। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে হংকং হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা বলছি। হংকংয়ের সঙ্গে এটাই ছিল এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের একমাত্র দেখা, আর সেখানেই লেপটে আছে হারের স্মৃতি। যদিও তুলনামূলক খর্বশক্তির দল, কিন্তু পুরোনো স্মৃতি খুঁজলে দেখা যায়, একটা ক্ষত তো রয়ে গেছেই।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ভারত-পাকিস্তান, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা যেন ক্রিকেট দুনিয়ার নতুন রিভালরি। যার পরিচিতি দুনিয়ার কাছে ‘নাগিন ডার্বি’ নামে। নাগিন নাচ থেকে শুরু হওয়া এই লড়াই বছরে বছরে ক্রমান্বয়ে শুধু বেড়েই চলেছে। ২০২৩ বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ‘টাইম আউট’–কাণ্ড দুই দলের দ্বৈরথ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এর পর থেকে যেন দুই দলের সমর্থকেরাই অপেক্ষায় থাকেন, কখন মুখোমুখি হবেন আর দুই দেশের সমর্থকেরা মাতবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়!

আর বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টি জগতে আফগানদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। একের পর এক তারকা খেলোয়াড় যেভাবে বেরিয়ে আসছে আফগানিস্তান থেকে। ঠিক সেভাবেই টি-টোয়েন্টিতে এগিয়েছে তারা। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলাই যেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আফগানদের বিপক্ষে ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে বেগ পেতে হবে নতুন বাংলাদেশকে।

আরও পড়ুন

একনজরে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দল

লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক)/(উইকেটরক্ষক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, সাইফ হাসান, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান সাকিব, তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

স্ট্যান্ডবাই: সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানভীর ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।

এশিয়া কাপের জন্য ১৬ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি। সেখানে সবচেয়ে বড় চমক বোধ হয় উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। প্রায় তিন বছর পর ফিরেছেন টি–টোয়েন্টি দলে। তাঁর সঙ্গে ফিরেছেন সাইফ হাসানও। মূল স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, যদিও দলের সঙ্গে যাবেন। সাইফ আর সোহান বহুদিন পর দলে ফিরলেও দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন অনেক দিন ধরেই। টি-টোয়েন্টিতে রান পাচ্ছেন, বিপিএল-গ্লোবাল সুপার লিগে চমক দেখিয়েছেন। সোহানের অধিনায়কত্ব মনে ধরেছে অনেকের। এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে টপ এন্ড টি–টোয়েন্টিতে বেশ ভালো করেছেন দুজন। তাঁরা যেমন দলে যোগ দিয়েছেন, তেমনই দলে কম্বিনেশনও হচ্ছে চমৎকার।

ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসান তামিম আর পারভেজ হোসেন ইমনের ওপেনিং জুটি ভালো করছে বেশ কিছুদিন ধরেই। প্রতি ম্যাচেই অন্তত একজন হাতে ধরে গড়ে তুলছেন ইনিংস। এমনকি ওপেনিং ছাড়ার পর ব্যাটে রান পাচ্ছেন অধিনায়ক লিটন দাসও। আর বল হাতে সদা প্রস্তুত মোস্তাফিজ, সাকিব, তাসকিন, শরীফুলরা। তাঁদের মধ্য থেকে কারা একাদশে জায়গা করে নেবেন, সে নিয়ে চিন্তায় পড়তে হবে কোচ ফিল সিমন্সের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন বলে আশা সবার। নইলে তরুণ এই দলটাকে নিয়েও বাংলাদেশকে ফিরতে হবে ব্যর্থ মনোরথে।

আরও পড়ুন