প্রোটিয়া, ব্ল্যাক ক্যাপস, থ্রি লায়নস—ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর এই নামগুলোর অর্থ কী
অনেক দেশ নিজেদের খেলোয়াড়দের আদর করে নিজস্ব নামে ডাকে। অনেক ক্ষেত্রে সেটাই এখন সেই দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের পরিচয়ে পরিণত হয়েছে।
যেমন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের কাছে খুবই মর্যাদাপূর্ণ তাদের ব্যাগি গ্রিন। টেস্ট ক্রিকেট খেলার সময় অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা গাঢ় সবুজ রঙের এক টুপি পরে। এই টুপিকেই বলা হয় ব্যাগি গ্রিন।
মার্টিয়াস নামের এক গাছের ঘন সবুজ পাতার যে রং থেকে ঘন সবুজ রং, এর নাম মার্টেয়াল গ্রিন। আর টেস্ট খেলার প্রায় শুরু থেকে অস্ট্রেলীয়রা এই সবুজ রঙের টুপি পরে মাঠে নামত। ব্যাগি মানে কী? এর একটি মানে ঢিলেঢালা বা ফোলাফাঁপা, আর আরেকটি মানে বেঢপ। আর ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ মানে তাহলে হয় ফোলাফাঁপা বা বেঢপ সবুজ রঙের টুপি।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের অজি বলে ডাকা হয়। অজি বলে বোঝানো হয় যে সে একজন অস্ট্রেলিয়ান বা এটা অস্ট্রেলিয়ার জিনিস। অস্ট্রেলিয়ার মেয়ে ক্রিকেটারদের একসময় সাউদার্ন স্টার বা দক্ষিণের তারা নামে ডাকা হতো। তবে এখন অস্ট্রেলিয়ার মেয়ে আর ছেলে উভয় ক্রিকেটারই অজি নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের ছেলে ক্রিকেটারেরা পরিচিত টাইগার নামে। আর মেয়ে ক্রিকেটারদের নাম টাইগ্রেস। কারণ, বাঘ শুধু বাংলাদেশের জাতীয় পশু নয়, একই সঙ্গে সাহস ও শক্তির প্রতীক। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পরাজিত হলে এর ক্ষোভ ও কোপ গিয়ে পড়ে বাঘের প্রতি। তখন কার্টুন বা মিমে দেখা যায় বাংলাদেশ হেরে গেছে মানে বাঘ স্ট্রেচারে শুয়ে আছে। অথবা বাংলাদেশ পরাজিত মানে বাঘের অবস্থা বা তার চেহারা করুণ।
ভারতের ক্রিকেটারদের বলা হয় মানুষ বা মেন ইন ব্লু। এই নামের কারণ ভারতের জার্সির রং নীল। আর যেহেতু ভারতে ছেলে ক্রিকেটারদের নাম মেন ইন ব্লু, সে কারণে মেয়ে ক্রিকেটারদের ওমেন ইন ব্লু নামে ডাকা হয়।
ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের নাম পেতে বেশ সময় লেগেছে। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের নাম থ্রি লায়ন। এটা অবশ্য ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের নামও বটে। মূলত ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বা ফুটবলের যে প্রতীক বা লোগো, সেখানে থাকা তিনটি সিংহ থেকে এই নামটি নেওয়া হয়েছে। আর সে কারণে মেয়েদের নাম থ্রি লায়োনেস। ক্যারিবীয় অঞ্চল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামেও পরিচিত আর সেখানকার ক্রিকেটাদের নাম দ্য উইন্ডিজ।
স্কটল্যান্ডের নারী ক্রিকেটারদের নাম ওয়াইল্ড ক্যাট। আর নেপালের ক্রিকেটারদের নাম রাইনোস বা গন্ডার। তাদের আরেকটি নাম কার্ডিয়াক কিড। এই নামটি তখন ব্যবহার করা হয়, যখন নেপাল ক্রিকেট বিশ্বের কোনো বড় দলকে হারিয়ে দেয়।
অনেক আগে ক্রিকেট বিশ্বে পা দিলেও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের নাম পেতে বেশ দেরি হয়েছে। পাকিস্তানের তরুণ ক্রিকেটারদের শাহিন বা বাজপাখি নামে ডাকা হলেও পাকিস্তানি সিনিয়র ক্রিকেটারদের মেন ইন গ্রিন নামে ডাকা হয়। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জার্সি সবুজ। মজার ব্যাপার হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটারদেরও একই নাম। তবে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটারদের আরেকটি নাম হোয়াইট অ্যান্ড গ্রিন ।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের নাম কিউই। কিউই মূলত একটি পাখির নাম। নিউজিল্যান্ডে পাওয়া যায় এই পাখি। আইকনিক এই পাখির নামেই ডাকা হয় নিউজিল্যান্ডকে। আবার দলটির অন্য আরেক নাম হচ্ছে ব্ল্যাক ক্যাপস। নিউজিল্যান্ডের জার্সি সাধারণত কালো হয়। ক্রিকেটের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের রাগবি দলের নামেও ব্ল্যাক আছে—অল ব্ল্যাক।
নিউজিল্যান্ডের মেয়েদের টিমের নাম সিলভার ফার্ন। নিউজিল্যান্ডের প্রতীক হচ্ছে সিলভার ফার্ন। সে কারণে নিউজিল্যান্ডের মেয়ে ক্রিকেটারদের সিলভার ফার্ন নামে ডাকা হয়।
প্রোটিয়া একটি ফুলের নাম। সেই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের নাম প্রোটিয়াস। দক্ষিণ আফ্রিকার পুরুষ ও নারী উভয় ক্রিকেটারের নাম একই। জিম্বাবুয়ের জাতীয় ক্রিকেট দলের নাম শেভরন। তেল কোম্পানি শেভরনের নামে এই নাম নয়, শেভরন মানে ইংরেজি ভি আকারের চিহ্ন। এর কারণ শেভরন দেশটির জন্য একতার প্রতীক।
এক ঐতিহাসিক কারণে শ্রীলঙ্কার নাগরিকেরা মনে করে তারা বিজয় সিংহ নামের এক বীর ও তাঁর সঙ্গীদের বংশধর। শ্রীলঙ্কার জাতীয় প্রতীক সিংহ। এ কারণে দেশটির ক্রিকেট টিমের ডাকনাম সিংহ। আর মহিলা ক্রিকেট দলের নাম সিংহী!