এক ম্যাচের কালজয়ী তারকা

কার্লোস ব্রাথওয়েটছবি: এক্স ডটকম

ক্রিকেট এক রহস্যময় খেলা। এখানে এক ম্যাচ দিয়েই কেউ উঠে যান শীর্ষে, ক্যারিয়ার তৈরি হয়ে যায় কারও। কেউ আবার একটা ভুল শট খেলেই হারিয়ে যান স্মৃতির পাতা থেকে। আজ এমন কয়েকজন খেলোয়াড়ের কথা বলব, যাঁরা তাঁদের ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো একটি পারফরম্যান্সই করেছিলেন। এরপর হয়তো আর সেভাবে এগোতে পারেননি। কিন্তু সেই এক ম্যাচের পারফরম্যান্স তাঁদের করে রেখেছে কালজয়ী।

করুন নায়ার (ভারত): অভিষেকে ট্রিপল সেঞ্চুরি

করুণ নায়ার
বিসিসিআই

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঠিক কতটা স্বপ্নিল হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে ভালোভাবে দিতে পারবেন করুন নায়ার। তাঁর ক্যারিয়ার শুরুই হয়েছিল ট্রিপল সেঞ্চুরি দিয়ে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মোহালিতে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ট্রিপল সেঞ্চুরি দিয়ে। ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এমনকি ‘লিটল মাস্টার’খ্যাত শচীন টেন্ডুলকারেরও নেই কোনো ট্রিপল সেঞ্চুরি। করুন নায়ার সেটা করে দেখিয়েছিলেন অভিষেকেই। ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে খেলেছিলেন অপরাজিত ৩০৩ রানের ইনিংস।

অথচ ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেও বাদ পড়তে হয়েছিল পরের ম্যাচে। কারণ, চোট থেকে সেরে তাঁর জায়গায় দলে ফিরেছিলেন আজিঙ্কা রাহানে। এরপর আর দাঁড়াতে পারেনি করুনের ক্যারিয়ার, দীর্ঘদিন পর করুন এ বছর আবারও ফিরেছেন জাতীয় দলে। কিন্তু বলার মতো কিছু করতে পারেননি। বাদ পড়ে গেছেন আবার। মোট ১০ টেস্ট শেষে তাঁর রান মাত্র ৫৭৯। করুন নায়ার স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর ট্রিপল সেঞ্চুরির জন্যই।

আরও পড়ুন

স্টুয়ার্ট বিনি (ভারত):  ৪ রানে ৬ উইকেট

বাংলাদেশকে দুঃস্বপ্ন দেখিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট বিনি। ছবি: এএফপি
ফাইল ছবি

স্টুয়ার্ট বিনি নামটা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এক ভয়ানক দুঃস্বপ্নের মতো। ২০১৪ সাল ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা ভুলে যাওয়ার মতো বছর। সে বছর সিরিজ খেলতে নিজেদের দুর্বল দলকে পাঠিয়েছিল ভারত। সুরেশ রাইনার অধীন সেই দলে দুঃস্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন স্টুয়ার্ট বিনি। সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ১০৫ রানে অল আউট করে জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল বাংলাদেশ। তখনই উড়ে এসে জুড়ে বসলেন বিনি। ৪ ওভার ৪ বলে ২টি মেডেন ওভার। ৪ রানের বিনিময়ে নেই ৬ উইকেট। বাকি চারটি গেছে মোহিত শর্মার পকেটে।

বিনির দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁকে স্থায়ী করতে পারেনি দলে। ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটে ২৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। উইকেট পেয়েছেন মাত্র ২৪টি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাত্র দুই বছর স্থায়ী হয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার।

আরও পড়ুন

পৃথ্বী শ (ভারত) :  অভিষেক টেস্টে ১৩৪

পৃথ্বী শ
ইনস্টাগ্রাম

পৃথ্বী শকে ধরা হতো শচীন টেন্ডুলকারের উত্তরসূরি। শুধু ভারতবাসী নয়, স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারের পছন্দের পাত্র ছিলেন তিনি। স্কুল ক্রিকেটে থাকতেই তাঁকে খেলানোর জন্য উড়িয়ে নিয়ে গেছে ইংল্যান্ডের দলগুলো। তিনিও স্বপ্ন দেখিয়েছেন বটে। অভিষেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে রেখেছিলেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। ২০১৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর। সেই ম্যাচেই ১৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জানান দিয়েছিলেন নিজের আগমনের। সেই আগমন আর হয়নি। ১২ ম্যাচেই থেমে গেছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। খেলাধুলায় অমনোযোগের কারণে ভারতীয় ক্রিকেট থেকে হারিয়ে গেছেন তিনি। তবে তাঁর ইনিংসটা এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে সবার মনে।

আরও পড়ুন

কার্লোস ব্রাথওয়েট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) :  বিশ্বকাপ ফাইনালে ৪ ছক্কা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কার্লোস ব্রাথওয়েট।
ছবি: টুইটার

৬ বলে দরকার ১৯ রান, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমীকরণ ছিল প্রায় অসম্ভব। কার্লোস ব্রাথওয়েট সেদিন অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন চার বলে চার ছক্কা মেরে। সেদিন বেন স্টোকসের সেরা বলটাও হয়েছিল সীমানাছাড়া। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি তো বলেই বসেছিলেন, ৬ বলে ৩৬ লাগলেও কার্লোস সেটা করে দেখাত।

অনেকেই ভেবেছিলেন টি-টোয়েন্টির যুগে ব্রাথওয়েট নিজের ক্যারিয়ার এগোবেন ভালোভাবেই। পোলার্ড-রাসেলের মতো দুর্দান্ত ক্যারিয়ার হবে তাঁর। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে তাঁর ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো আরেকটি ইনিংসও আছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮২ বলে ১০১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। নিশ্চিত হারের মুখ থেকে দলকে প্রায় বাঁচিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় থেকে ৬ রান দূরে থামতে হয় তাঁকে। ব্যর্থ সেই ইনিংস দিয়েও অনেক দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি।

আরও পড়ুন

চার্লস কভেন্ট্রি (জিম্বাবুয়ে)

চার্লস কভেন্ট্রি, ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন যিনি।

চার্লস কভেন্ট্রি নামটা অন্তত বাংলাদেশি সমর্থকদের ভোলার কথা নয়। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ক্রিকেট ইতিহাসে রেকর্ড গড়েছিলেন কভেন্ট্রি। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে করেছিল ৩১২ রান। ৩ নম্বরে নেমে ১৬টি চার আর ৭ ছক্কায় চার্লস কভেন্ট্রি একাই করেছিলেন ১৯৪ রান। একসময় মনে হচ্ছিল এক দিনের ক্রিকেটে ২০০ রানের রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন তিনি (ওয়ানডে ক্রিকেটে তৎকালীন সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিল ১৯৪)। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৫৬ বলে ১৯৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। বেশি কিছুদিন ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডটি ছিল কভেন্ট্রির দখলে।

যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে। তামিম ইকবালের ১৫৪ রানের ইনিংসে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সেটা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান। সেই ম্যাচের প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন যৌথভাবে তামিম ও কভেন্ট্রি । তামিমের ক্যারিয়ার তুঙ্গে উঠে গেলেও কভেন্ট্রির ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল দ্রুতই। মাত্র ৫৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২০১৫ সালেই শেষ হয়ে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে ৩ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড এখনো আছে তাঁর নামের পাশে।

আরও পড়ুন