৫০০ মিলিয়ন খরচ করেও কেন হারছে লিভারপুল?
এক-দুই ম্যাচ নয়, লিভারপুল হারের বৃত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে চার ম্যাচ ধরে। কোচ আর্নে স্লটের অধীনে প্রথম মৌসুমেই লিগ জেতা দলটা নাকি নিজেদের খুঁজেই পাচ্ছে না মাঠে। টানা চার ম্যাচ হার রীতিমত হাস্যরসে পরিণত করেছে লিভারপুলকে। কারণ, বহু বছর পর দলবদলের মৌসুমে খরচ করার স্বাধীনতা পেয়েছিলেন লিভারপুলের কোনো কোচ। সেই খরচ করাই কি কাল হলো লিভারপুলের জন্য?
লিভারপুলের শেষ জয় এসেছিল প্রায় এক মাস আগে, লিগের শেষ সারিতে থাকা সাউদাম্পটনের বিপক্ষে। এরপর থেকে টানা চার ম্যাচে শুধু হারের মুখ দেখে গিয়েছে আর্নে স্লটের দল। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টাল প্যালেস, গ্যালাতেরাসে, চেলসি ও সবশেষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চারটি ম্যাচেই হারের ব্যবধান মাত্র ১ গোলে। অর্থাৎ লিভারপুল লাইনেই আছে, কিন্তু কোথাও যেন একটা তার কেটে গিয়েছে। সে কারণে আর সুর উঠছে না খেলায়।
লিভারপুল শেষ এমন দূর্দশা দেখেছিল ২০১৪ সালে। সেবার ব্র্যান্ডন রজার্সের অধীনে টানা চার ম্যাচে হারের দেখা পেয়েছিল অল রেডসরা। সেই হারের পর থেকেই বদল আসে দলে, ইয়ুর্গেন ক্লপ যোগ দেন অল রেডসে। লিভারপুলকে বিশ্বসেরা বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল তার হাত ধরেই। আর্নে স্লট যেন ছিলেন তার যোগ্য উত্তরসূরি। প্রথম মৌসুমে কোন দলবদল ছাড়াই দলকে এনে দিয়েছিলেন লিগ শিরোপা। যা দেখে খুশি হয়ে হাত খুলে খরচ করার সুযোগ দিয়েছিল বোর্ড। ৫০০ মিলিয়ন খরচ করে ফ্লোরিয়ান ভির্টজ, অ্যালেকজেন্দার ইসাক, হুগো একিতেকের মতো খেলোয়াড় ভিড়িয়ে কী হলো যদি দল জয়ের ধারায়ই না থাকে?
লিভারপুল ঝামেলায় পড়েছে নতুন খেলোয়াড়দের নিয়েই। দলে নতুন খেলোয়াড় আনা মানেই যে নিশ্চিত সাফল্য নয়, তার প্রমাণ এখনকার লিভারপুল। একের পর এক ম্যাচ চলে যাচ্ছে, লিভারপুল কোনোভাবেই নিজেদের ফর্মে ফিরতে পারছে না। ফর্মে ফেরা দূরে থাকুক, নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারছেন না নতুন খেলোয়াড়েরা। একজন একজন করেই শুরু করা যাক। দলবদলের মৌসুমের শুরুতেই রেকর্ড গড়ে বায়ার লেভারকুসেন থেকে ফ্লোরিয়ান ভির্টজকে দলে ভিড়িয়েছিল অল রেডসরা। ১২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দেন লিভারপুলে। অথচ ১০ ম্যাচ পেরিয়ে গেলেও মাঠে কোনো কাজের কাজই করতে পারেননি তিনি। না আছে কোন গোল, না আছে কোনো অ্যাসিস্ট। রীতিমত মাঠে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ান তিনি। সতীর্থদের সঙ্গে মাঠে বনিবনাও হচ্ছে না তাঁর। এমনকি কোচ আর্নে স্লট বেঞ্চেও বসাচ্ছেন না তাঁকে। বরং তাঁকে ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ দিচ্ছেন প্রথম একাদশে। ফলে মাঝমাঠে কম্বিনেশনের অভাবে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
একই ঘটনা অ্যালেঙ্কজেন্দার ইসাকের ক্ষেত্রেও। রীতিমত যুদ্ধ করে ইসাককে দলে ভিড়িয়েছিল লিভারপুল। কোনোভাবেই তাঁকে যেতে দিতে রাজি ছিল না নিউক্যাসল। কিন্তু ট্রেনিং মিস করে, দলের অনুষ্ঠানে অংশ না নিয়ে চক্ষুশূলে পরিণত হন ইসাক। অতঃপর ১৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইসাক যোগ দেন লিভারপুলে। এর পর থেকে আট ম্যাচে মাঠে নেমেছেন, পেয়েছেন মাত্র ১ গোল। এত দাম দিয়ে কেনা স্ট্রাইকারের কাছ থেকে আরেকটু ভালো কিছু আশা থাকে সমর্থকদের। কিন্তু সে আশার গুড়েবালি করে দিয়েছেন ইসাক।
জেরেমি ফ্রিমপং, মিলোস কিরকিজ কেউই নিজেদের নামের সুনাম করতে পারছেন না। বরং যত দিন যাচ্ছে তাদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছে, আগেই যেন লিভারপুল ভালো ছিল। লিভারপুলের কেনা তারকাদের মধ্যে শুধুমাত্র একজনই নিজের নামের সুনাম করতে পেরেছেন। হুগো ইকিতেকে। ফ্রেঞ্চ সেই স্ট্রাইকার দলের সঙ্গে যেমন মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তেমনই মৌসুমের শুরুতে ছিলেন ফর্মের তুঙ্গেও। ফলে তাঁর কাছ থেকে আউটপুট ঠিকই পেয়েছে লিভারপুল। ১২ ম্যাচে ৬ গোল নতুন স্ট্রাইকারের জন্য বেশ চলনসই।
ফর্মে থাকা খেলোয়াড়কেও যেন ব্যবহার করতে পারছেন না স্লট। কারণ ইসাক আসার পর থেকেই একিতেকের জায়গা নিয়ে শুরু হয়েছে কাড়াকাড়ি। ফলে তাঁকে নামতে হচ্ছে দ্বিতীয়ার্ধে। একই ঘটনা ফেদেরিকো কিয়েসার ক্ষেত্রেও। এই মৌসুমে লিভারপুলকে শেষ মুহূর্তে জয় এনে দেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা কিয়েসার। অথচ তাঁকে একাদশে জায়গা না দিয়ে বেঞ্চেই রাখা হয় বেশি। দামী অফ ফর্মে থাকা খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে গিয়ে যেন নিজের পায়েই নিজে কুড়াল মারছেন স্লট।
লিভারপুলের দূর্দিনের পেছনে পুরোনো খেলোয়াড়দের অফ ফর্মটাও বড় একটা ধাক্কা। বিশেষ করে মোহাম্মদ সালাহ এই মৌসুমে গোল করেছেন মাত্র ৩টি। দলের সেরা তারকা যদি সময়ে অসময়ে জ্বলে উঠতে না পারেন, তাহলে তো দলের জন্য বিপদই। সব মিলিয়ে লিভারপুলের সামনে এখন বেশ কঠিন সময়। চ্যাম্পিয়নস লিগে আইন্ত্রাখ ফ্র্যাঙ্কফ্রুটের বিপক্ষে ৫-১ গোলের জয় একটু স্বস্তি ফিরিয়ে দিবে লিভারপুলে। ইতোমধ্যে লিগ টেবিলের তিনে নেমে গিয়েছে লিভারপুল। কিন্তু দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না মিললে হয়তো লিগের আশা ছেড়ে দিতে হতে পারে মাঝপথেই।