হয়েও হয়নি যে দলবদল
একটা দলবদল কীভাবে সম্পন্ন হয়? প্রথমে রাজি হতে হয় দলকে। তারা কি খেলোয়াড়কে ছাড়তে চায়? খেলোয়াড়কে ছাড়লে কি তাদের দল ঠিকভাবে চলবে? অতঃপর সেখানে সবুজ সংকেত পেলেই দলগুলো হাত বাড়ায় খেলোয়াড়দের দিকে। ক্লাব না হয় রাজি, কিন্তু খেলোয়াড়কেও তো রাজি হতে হবে। কখনো কখনো প্রথম ধাপ ফেলে দ্বিতীয় ধাপেও এগোয় দলগুলো। কিন্তু কখনো কি এমন শুনেছ যে দুই ধাপ পার করার পরও দলবদল হয়নি? ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে দেখা গেছে এমনই এক ঘটনা।
ঘটনার মূলে যেতে ফিরে যেতে হবে কিছুদিন পেছনে। অনেক দিন ধরেই লিভারপুলের রাডারে ছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেসের ডিফেন্ডার মার্ক গেহি। তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স শুধু লিভারপুল হয়, নজর কেড়েছিল অনেকেরই। কিন্তু গেহি চেয়েছিলেন শুধু লিভারপুলকেই। ক্রিস্টাল প্যালেসের অধিনায়ক বলে দলকে ছাড়াও এত সহজ ছিল না, অন্যদের মতো দল ছাড়ার জন্য উচ্চবাচ্যও করেননি। অপেক্ষা করেছেন পছন্দের দলের প্রস্তাবের জন্য। শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের প্রস্তাব এসে পৌঁছায় একেবারে ডেডলাইন ডের কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু আগে থেকেই তো গেহি আর লিভারপুলের কথা শেষ, দলের সঙ্গেও সমঝোতা হয়ে আছে। লিভারপুলের ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের অফার তাই নাকচ হওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ ছিল না। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, বেঁকে বসলেন ক্রিস্টাল প্যালেসের কোচ অলিভার গ্লাসনার।
নিজের দলের অধিনায়ককে কে ছাড়তে চান? যাঁকে কেন্দ্র করে পুরো রক্ষণভাগ সাজিয়েছেন, সেই খেলোয়াড়কে বিদায় বলা কি এত সহজ? গ্লাসনার তাই আবদার করেছিলেন বোর্ডের কাছে, যদি ছাড়তেই হয় তাহলে তাঁকে যেন যোগ্য খেলোয়াড় বুঝিয়ে দিয়ে ছাড়া হয়। মার্ক গেহির উপযুক্ত রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া তাঁকে বিদায় বলা যাবে না। লিভারপুলের প্রস্তাব পেয়ে তাই তড়িঘড়ি করে মার্কেটে নামে ক্রিস্টাল প্যালেস। মনমতো খেলোয়াড় যে পায়নি তা নয়, দুজন ডিফেন্ডারকে চোখে পড়ে তাদের। ফ্রেঞ্চ ক্লাব তুলুস থেকে ১৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে জেডি ক্যানভোকে দলে ভেড়ায় প্যালেস। কিন্তু কোচের চাওয়া ছিল আরেকজন ডিফেন্ডার। ব্রাইটনের ডিফেন্ডার ইগোর জুলিওর দিকে ছিল তাদের নজর। কিন্তু ইগোর জুলিওর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় প্যালেসের বদলে তিনি যোগ দেন ওয়েস্ট হামে। ফলাফল? কোচ ওলি গ্লাসনারের শর্ত পূরণ হয়নি। কোচই বসলেন বেঁকে, আমি আমার অধিনায়ককে ছাড়ব না।
এরপরই দেখা মিলল এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের। দল রাজি, খেলোয়াড় রাজি, মেডিকেলের জন্য উড়াল দেবেন বৈকি। কিন্তু এর মাঝেই কোচ বেঁকে বসায় ভেস্তে গেল পুরো দলবদল। ওলি গ্লাসনার সরাসরি হুমকি দিয়ে বসেছিলেন—ক্রিস্টাল প্যালেস যদি বিড গ্রহণ করে তবে সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করবেন তিনি। ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতানো কোচকে এত সহজে যেতে দিতে চায়নি প্যালেস। ফলে বাধা পড়েছে মার্ক গেহির দলবদলে। শেষ মুহূর্তে এসে কাটা পড়েছে গেহির লিভারপুলে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন।
গেহির স্বপ্ন যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। বরং তাঁর সামনে সুযোগ আছে পরের মৌসুমেই লিভারপুলে যোগ দেওয়ার। কারণ, ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে তাঁর চুক্তি বাকি আছে মাত্র এক মৌসুম। এরপরই ফ্রিতে যেকোনো দলে যোগ দিতে পারবেন তিনি। এবারই শেষ সুযোগ ছিল ক্রিস্টাল প্যালেসের, নিজেদের অধিনায়ককে বিক্রি করে কিছু টাকাপয়সা কামানোর। কিন্তু সেই সুযোগ নিতে দেননি কোচ। বরং কোচ ধরে রেখেছেন তাঁর দলকে। তাই তো দলবদলের এক মাস যেতে না যেতেই বদলে গেছে সব সমীকরণ।
গত ম্যাচে লিভারপুলকে হারিয়ে ১৮ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছে ক্রিস্টাল প্যালেস। মজার ব্যাপার হলো, জয়সূচক গোলটা এসেছে মার্ক গেহির অ্যাসিস্ট থেকে। পয়েন্ট টেবিলে এখন তাদের অবস্থান ২। অন্যদিকে মার্ক গেহি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। লিভারপুলের প্রতি মোহও কেটে গেছে অনেকখানি। কারণ, লিভারপুল চাইলেই কয়েক দিন আগে প্রস্তাব দিতে পারত তাঁর জন্য। কিন্তু ইসাকের দলবদলে তারা এতটাই ব্যস্ত ছিল যে গেহির দিকে নজর দেওয়ার সময়ই হয়নি তাদের। তাই তো গেহি দ্বিতীয়বার ভাবছেন যোগ দেবেন কি না। কারণ, তাঁকে ফ্রিতে লুফে নেওয়ার জন্য দরজায় কড়া নাড়ছে অনেকেই। দেখা যাক গেহি কী সিদ্ধান্ত নেন। তবে যে সিদ্ধান্তই আসুক না কেন তাদের কাছ থেকে, সবকিছু হয়েও দলবদল না হওয়া ‘গেহি ট্রান্সফার’ অনেক দিন স্মৃতিতে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের।