ম্যাচে হেরেও ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’
কথায় আছে, ইতিহাস লেখা হয় জয়ীদের দ্বারা। যারা জেতে, তারাই গল্প বলে বিশ্বজয়ের। ক্রিকেটও তার ব্যতিক্রম হয় না। সাধারণত ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ খেতাব পান ম্যাচ জেতানো নায়কেরা। কিন্তু কিছু কিছু পারফরম্যান্স এমন থাকে যে ম্যাচ না জিতেও ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’-এর দাবিদার হন অনেকে। আজকের লেখায় থাকছে তেমনই কয়েকটি পারফরম্যান্সের নাম।
দুনিথ ওয়েল্লালাগে (শ্রীলঙ্কা) | ৫/৪০ ও ৪২*(৪৬) বনাম ভারত
২০২৩ এশিয়া কাপের সুপার ফোর, ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও ভারত। সেই ম্যাচেই অবিশ্বাস্য দুই পারফরম্যান্সের সাক্ষী হলো ক্রিকেট বিশ্ব। ২০ বছর বয়সী দুনিথ ওয়েল্লালাগে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দেন ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে। রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, কে এল রাহুল এবং হার্দিক পান্ডিয়ার উইকেট নিয়ে বদলে দেন ম্যাচের চিত্র। ৪০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে আটকে দেন ২১৩ রানে। সেই রান পার করতে খুব একটা বেগ পাওয়ার কথা না লঙ্কানদের। কিন্তু ব্যাটিং বিপর্যয়ে হাল ধরতে হয় দুনিথ ওয়েল্লালাগেকে। ৮ নম্বরে নেমে ৪৬ বলে ৪২ করে দলের জয়ের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মাঠে টিকে ছিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। তাঁকে সঙ্গ দিতে পারলে হয়তো ভারতের বিপক্ষে জয় নিয়ে আসতেও পারতেন। শেষ পর্যন্ত তা না পারলেও তাঁর দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তাঁর হাতে ওঠে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার।
ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া) | ১৮১* (১৬৬) বনাম নিউজিল্যান্ড
ওপেনিং পজিশনও যে আক্রমণাত্মক হতে পারে, সেই দর্শন এক দিনের ক্রিকেটে এনেছিলেন সনাথ জয়াসুরিয়া। আর সেই দর্শনে ভর করে ক্যারিয়ার গড়েছিলেন ম্যাথু হেইডেন। অজি এই ব্যাটসম্যান ছিলেন সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের বিধ্বংসী ওপেনার। ২০০৭ সালে হ্যামিলটনে দেখা মিলেছিল তাঁর মারমুখী রূপ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৬ বলে ১৮১ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন হেইডেন, যা ছিল সাঈদ আনোয়ারের পর এক দিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ। তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শেষ করে ৫ উইকেটে ৩৪৬ রান নিয়ে। সেখান থেকে ম্যাচ হারা রীতিমতো অসম্ভবই ছিল যে কারও জন্য। কিন্তু ক্রেইগ ম্যাকমিলানের ১১৭ রানের ইনিংস বদলে দেয় চিত্র। ৩ বল হাতে রেখেই জিতে নেয় ম্যাচ। সেই সঙ্গে সিরিজও জিতে অজিদের হোয়াইটওয়াশ করে। তবে সেই রেকর্ড গড়া ইনিংস জিতে নেয় ম্যান অব দ্য ম্যাচের শিরোপা।
চার্লস কভেন্ট্রি (জিম্বাবুয়ে) | ১৯৪*(১৫৬) বনাম বাংলাদেশ
এবারের গল্পটা অবশ্য দ্বৈতভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পাওয়ার গল্প। কারণ, দুই দলের দুই তারকাই ভেঙেছিলেন রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের হয়ে তিন নম্বরে খেলতে নেমে চার্লস কভেন্ট্রি ছুঁয়েছিলেন সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ রানের ইনিংস। তৎকালীন সময়ে সেটাই ছিল এক দিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ১৬ চার ও ৭ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে ভর করে ৩১২ রানের বিশাল পাহাড় গড়ে জিম্বাবুয়ে।
সেই রানের পাহাড় বাংলাদেশ তাড়া করে তামিম ইকবালকে সঙ্গী করে। ১৩৮ বলে ১৫৪ করে তামিম দলকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত জয়, যা ছিল বাংলাদেশের এক দিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ফলে সম্মাননাস্বরূপ তাঁদের দুজনকেই দেওয়া হয় ম্যাচসেরার পুরস্কার।
শেন বন্ড | ৬/২৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
একুশ শতকের শুরুর দিকের অন্যতম গতি তারকা শেন বন্ড। ২০০৩ বিশ্বকাপে শেন বন্ড ছিলেন নিজের সেরা গতি আর ফর্মে। তাঁর বোলিংয়ের সামনে রীতিমতো ছত্রভঙ্গ হয়ে যেত প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ। সেটা হোক না অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া দল। শেন বন্ডের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে অপরাজেয় ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে গেল মাত্র ২০৮ রানে। ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে আস্ট্রেলিয়ার তারকাসমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দিয়েছিলেন বন্ড। কিন্তু টেলএন্ডারদের কল্যাণে কোনোমতে দুই শ ছাড়িয়েছিল অজিরা।
কিউইরা ধরেই রেখেছিল তাদের জন্য হেসেখেলে জেতার মতো একটা ম্যাচ অপেক্ষা করছে। কিন্তু না। ২০৯ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ড আউট হয়ে গেল মাত্র ১১২ রানে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন আরেক গতি তারকা ব্রেট লি। কিন্তু দুই তারকার মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল শেন বন্ডকে। ২৩ রানে ৬ উইকেট নেওয়ায় হেরে গিয়েও ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন তিনি।
ক্রিকেট দুনিয়ায় আরও হেরে গিয়েও ম্যাচসেরা হওয়ার উদাহরণ আছে। সেই গল্প হবে আরেক দিন।