জগতে মায়ের মতো আপন আর কেউ নেই। দিন শেষে মেয়ের আশ্রয়স্থল মা। মেয়েরা যেমন স্কুলে সারাদিন কী ঘটল, তা মাকে না বলা পর্যন্ত শান্তি পায় না, তেমনি মা-ও অফিসে বা বাসায় কী হয়েছে, তা মেয়েকে না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পান না। এমনটাই বলছিলেন এক মা, যাঁর মেয়ের সঙ্গে এক দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক। তিনি বলেন, 'স্কুলের গল্প আমাকে বলে শেষ না করা পর্যন্ত ওর স্কুল ড্রেসও খোলা হয় না।'
মা-মেয়ের এই অনন্য সম্পর্ক উদ্যাপন করতে গত শনিবার বিকেলে এক বিশেষ আয়োজন করে কিশোর আলো। এসিআই সুপার ড্রাই-এর সহযোগিতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় 'মা-মেয়ের গল্প' অনুষ্ঠানটি। এখানে মা ও মেয়েরা নিজেদের না-বলা কথাগুলো ভাগ করে নেন, আর পাশাপাশি পুষ্টিবিদ, মনোবিদ ও শিল্পীরা তাদের মূল্যবান পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মা ও মেয়েরা এই আয়োজনটি উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক গল্প বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, 'এফ আর খান স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর তৎকালীন সবচেয়ে উঁচু ভবন সিয়ার্স টাওয়ার তাঁরই নকশা করা। সেই ভবনের সামনে লেখা আছে, একজন প্রযুক্তিবিদকে শুধু তাঁর নিজের প্রযুক্তির মধ্যে ডুবে থাকলে চলবে না। জীবনকে উপভোগ করতে জানতে হবে। আর জীবন মানেই হলো শিল্প, নাটক, গান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষ।'
ফারহানা রুমী, যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন, নিজের শিক্ষক পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে 'মা' বলতে বেশি ভালোবাসেন। তিনি তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি বলেন, 'ওদের সঙ্গে মিলেমিশে আমি দুষ্টুমিগুলো করি। এমনকি দুষ্টুমি করে আমার মায়ের কাছে ধরা পড়ে তিনজনই বকা খাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা খুব জরুরি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে মা-মেয়ে উভয়ের জন্যই তা লাভজনক হয়।'
জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা এখন থেকে আমি আপনাকে লেখায় সাহায্য করব। নিচে আপনার দেওয়া লেখাটির আরেকটি সংস্করণ তৈরি করে দেওয়া হলো, যেখানে কোনো সাবহেডিং ব্যবহার করা হয়নি:
জগতে মায়ের মতো আপন আর কেউ নেই। দিন শেষে মেয়ের আশ্রয়স্থল মা। মেয়েরা যেমন স্কুলে সারাদিন কী ঘটল, তা মাকে না বলা পর্যন্ত শান্তি পায় না, তেমনি মা-ও অফিসে বা বাসায় কী হয়েছে, তা মেয়েকে না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পান না। এমনটাই বলছিলেন এক মা, যাঁর মেয়ের সঙ্গে এক দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক। তিনি বলেন, 'স্কুলের গল্প আমাকে বলে শেষ না করা পর্যন্ত ওর স্কুল ড্রেসও খোলা হয় না।'
মা-মেয়ের এই অনন্য সম্পর্ক উদ্যাপন করতে গত শনিবার বিকেলে এক বিশেষ আয়োজন করে কিশোর আলো। এসিআই সুপার ড্রাই-এর সহযোগিতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় 'মা-মেয়ের গল্প' অনুষ্ঠানটি। এখানে মা ও মেয়েরা নিজেদের না-বলা কথাগুলো ভাগ করে নেন, আর পাশাপাশি পুষ্টিবিদ, মনোবিদ ও শিল্পীরা তাদের মূল্যবান পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মা ও মেয়েরা এই আয়োজনটি উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক গল্প বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, 'এফ আর খান স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর তৎকালীন সবচেয়ে উঁচু ভবন সিয়ার্স টাওয়ার তাঁরই নকশা করা। সেই ভবনের সামনে লেখা আছে, একজন প্রযুক্তিবিদকে শুধু তাঁর নিজের প্রযুক্তির মধ্যে ডুবে থাকলে চলবে না। জীবনকে উপভোগ করতে জানতে হবে। আর জীবন মানেই হলো শিল্প, নাটক, গান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষ।'
ফারহানা রুমী, যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন, নিজের শিক্ষক পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে 'মা' বলতে বেশি ভালোবাসেন। তিনি তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি বলেন, "ওদের সঙ্গে মিলেমিশে আমি দুষ্টুমিগুলো করি। এমনকি দুষ্টুমি করে আমার মায়ের কাছে ধরা পড়ে তিনজনই বকা খাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা খুব জরুরি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে মা-মেয়ে উভয়ের জন্যই তা লাভজনক হয়।'
জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মেহজাবীনও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এক শিক্ষার্থী তাঁকে প্রশ্ন করে, বড় মেয়ে হিসেবে তিনি মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে রক্ষা করেন? মেহজাবীন উত্তর দেন, 'প্রশ্নটার অনেক গভীর অর্থ আছে। আমি আগে ভাবতাম প্রতিদিন বা অন্তত দু-তিন দিন পরপর মায়ের সঙ্গে দেখা করব। কিন্তু বাসা বদলানোর কারণে এখন নিয়মিত যেতে পারি না। তবে আমার মা-ই আমার সবকিছু।'
আরেক মা মাহফুজা তিথি তাঁর মেয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে ছোট থেকেই খুব দায়িত্বশীল। ওর বাবা যখন মারা যান, তখন ওর বয়স মাত্র ৪ বছর। এর পর থেকেই ও বেশ দায়িত্ব নিয়ে সব কাজ করে। এখন এমন হয়েছে, আমি আমার বেতন ওকে দিয়ে দিই, আর ও বাসার সব দায়িত্ব সামলায়। আমাদের দায়িত্বটা বদলে গেছে। ও যেন মা, আর আমি যেন মেয়ে হয়ে গেছি। ও আমাকে পথ দেখায়।'
শিক্ষিকা লাবণী সাহাও এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মেয়ে অপরাজিতা সাহার বয়স যখন ৪ বছর, তখন থেকেই তিনি চাকরি করছেন। তিনি বলেন, 'অনার্স পরীক্ষার শেষ পরীক্ষাটা আমি অসুস্থ অবস্থায় দিয়েছি। ওর জন্মের পর আমাকে হাসপাতালের বেড থেকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। যেকোনো উপায়ে ও আমাকে কখনো হারতে দেয়নি। তাই ওর নাম রেখেছি অপরাজিতা। আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। ও এখনো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, এখন যেন ওর স্বপ্ন পূরণ হয়।'
অনুষ্ঠানে আলোচকদের কথায় উঠে আসে যে, মা হলেন সন্তানের সেরা বন্ধু এবং সন্তানকে সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারেন।
স্পেশালাইজড গ্যাস্ট্রোলিভার কেয়ারের প্রধান ডায়েটিশিয়ান পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান সবাইকে পুষ্টি বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, 'মা ভালো না থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো থাকতে পারে না। তবে মা সবাইকে নিয়ে ভাবলেও অন্যরা মাকে নিয়ে ভাবে না। মায়েদের সুস্থ থাকা জরুরি। কারণ, মা সুস্থ না থাকলে পরের প্রজন্ম সুস্থ থাকবে না। মা যে খাবারটা খান, সন্তানের শরীর সেভাবেই গঠিত হয়। মায়ের গর্ভের শিশু জেনেটিকভাবে মায়ের স্বাস্থ্য পায়। তাই মা ও মেয়ে, দুজনেরই পুষ্টি খুব জরুরি। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন। শুধু শরীরের পুষ্টি হলেই হবে না, মেধাও কাজে লাগাতে হবে।'
একজন মা প্রশ্ন করেন যে তাঁর মেয়ে ফল খেতে চায় না, কীভাবে খাওয়ানো যায়? পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান বলেন, 'শুধু ফল না খেলে কাস্টার্ড বানিয়ে দিতে পারেন। খাবারে বৈচিত্র্য থাকলে মেয়েরা খাবে। মেয়েরা বড় হয়ে যখন নিজেরাই খাবারের গুরুত্ব বুঝবে, তখন ঠিকই খাবে।'
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও মনোবিদ ফারজানা রহমান মা-মেয়ের মাসিক স্বাস্থ্যবিধি (মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন) ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের কো-অর্ডিনেটর মাহবুবা সুলতানা ও তাঁর মেয়ে তৃণা। তৃণা বলেন, 'আমার মা থাকলে আমার আর কিছুই লাগে না।' অনুষ্ঠানের এক আবেগঘন মুহূর্তে একজন মেয়ে জানায়, "আমি কখনো মাকে 'সরি' বলিনি। আজ আমি আমার মাকে 'সরি' বলতে চাই।" মা আবেগাপ্লুত হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন।
মা-মেয়ে একে অপরের পছন্দের খাবার বা সিনেমার মতো বিষয়গুলো কতটা জানেন, তা যাচাই করার জন্য কুইজের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে মায়েরা সঠিক উত্তর দিয়ে তাঁদের গভীর বোঝাপড়ার প্রমাণ দেন।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা ও তাঁর দুই মেয়ে টাপুর-টুপুরও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। টাপুর-টুপুরের সঙ্গে মা ছন্দার চমৎকার সম্পর্ক। টাপুর-টুপুর চতুর্থ শ্রেণি থেকে দার্জিলিংয়ের বোর্ডিং স্কুলে পড়ায় মা ছন্দা সব সময় মেয়েদের কাছে পাননি। ছন্দা বলেন, 'আমার বাবার যখন ৪২ বছর বয়স, তখন আমি তাঁকে হারাই। আমার মা ছিলেন গৃহিণী। তিনি চাকরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিবারের চাপে কাজে যোগ দিতে পারেননি। আত্মনির্ভরশীল হতে পারেননি। আমাদের জীবনে আত্মনির্ভরশীলতা অনেক জরুরি।' টাপুর-টুপুর মায়ের কথায় সায় দেয়। টাপুর বলে, 'আমার মা আমার জীবন। আমি মাকে অসম্ভব ভালোবাসি।' টুপুর যোগ করে, 'মা-মেয়ের সম্পর্কটা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া উপহার। মা আমাদের প্রচণ্ড বিশ্বাস করেন। এই বিশ্বাস আমাদের রাখতে হবে।'
অনুষ্ঠানে আরও যোগ দেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনা, যিনি তাঁর প্রথম অ্যালবাম থেকে গান গেয়ে শোনান। মেয়েদের জন্য ছিল কুইজ ও পুরস্কারের ব্যবস্থা, আর সবার জন্য ছিল কিশোর আলো ও এসিআইয়ের পক্ষ থেকে উপহার।