কোন নামের কত পোপ ছিলেন

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক পোপফাইল ছবি: রয়টার্স

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের নতুন পোপ হলেন রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট। পোপ হলো ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। গত ২১ এপ্রিল মারা যান পোপ ফ্রান্সিস। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ২০১৩ সালে তিনি পোপ নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন আর্জেন্টিনার তথা দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ। রবার্ট ফ্রান্সিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কার্ডিনাল, যিনি পোপ নির্বাচিত হলেন।

বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে আসা ১৩৩ জন কার্ডিনালের অতি গোপন ভোটাভুটি থেকে রবার্ট ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হন। এখন তিনি বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের নতুন ধর্মগুরু। ৮ মে সন্ধ্যায় ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার বারান্দায় ২৬৭তম পোপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ৬৯ বছর বয়সী এই কার্ডিনাল।

পোপদের ১৩টি নামের প্রতিটি নামের নিজস্ব ইতিহাস ও অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে, যা সেই নাম বহনকারী পূর্ববর্তী পোপদের সাফল্য অথবা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

নির্বাচিত হওয়ার পর পোপদের দীর্ঘ ঐতিহ্য অনুযায়ী নতুন ধর্মীয় নেতার একটি নতুন নাম গ্রহণ করতে হয়। যেমনটি করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর প্রকৃত নাম জর্জ মারিও। তিনি নতুন নাম হিসেবে বেছে নেন ফ্রান্সিস। রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্টের ক্ষেত্রেও এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি পরিচিত হবেন ‘লিও’ নামে। তিনি লিও নাম নেওয়া চতুর্দশ পোপ। মানে তাঁর আগে আরও ১৩ জন এই নামে পরিচিত ছিলেন।

আরও পড়ুন
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন ২১ এপ্রিল
ছবি: এএফপি

পোপদের নির্বাচিত নামের মধ্যে ‘লিও’ এখন চতুর্থ সর্বাধিক ব্যবহৃত নাম, যা ‘ক্লেমেন্ট’ নামের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নাম ‘জন’। এ পর্যন্ত ২১ জন পোপ এই নাম ব্যবহার করেছেন। এরপর রয়েছে ‘গ্রেগরি’ ও ‘বেনেডিক্ট’। গ্রেগরি ব্যবহার করা হয়েছে ১৬ বার। আর বেনেডিক্ট ব্যবহার করেছেন ১৫ জন পোপ। ‘আদ্রিয়ান’ ও ‘পল’ নাম দুটি সবচেয়ে কম ব্যবহৃত হয়েছে। মাত্র ছয়বার। তবে এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে কোনো পোপ ‘লিও’ নাম নেননি। অর্থাৎ প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় পর লিও নাম নিলেন কোনো পোপ।

সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ব্যালকনিতে নতুন নির্বাচিত পোপ চতুর্দশ লিও। ভ্যাটিকান, ৮ মে ২০২৫
ছবি: এপি

সর্বশেষ পোপ লিও ছিলেন ত্রয়োদশ লিও, যিনি ১৮১০ সালে ফরাসি–অধিকৃত রোমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৮৭৮ সাল থেকে ১৯০৩ সালে আমৃত্যু পোপের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে পোপের দায়িত্ব পালন করেছেন, যা ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে চতুর্থ দীর্ঘতম সময়। ক্যাথলিকদের কাছে ত্রয়োদশ লিও ক্যাথলিক সামাজিক শিক্ষার প্রবর্তক হিসেবে স্মরণীয়।

নির্বাচিত হওয়ার পর পোপদের দীর্ঘ ঐতিহ্য অনুযায়ী নতুন ধর্মীয় নেতার একটি নতুন নাম গ্রহণ করতে হয়। যেমনটি করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর প্রকৃত নাম জর্জ মারিও।

প্রথম পোপ ছিলেন সেইন্ট পিটার, যিনি যিশুর বারোজন শিষ্যের একজন। তাঁর জন্মগত নাম ‘সাইমন’ বদলে যিশু নতুন নাম দিয়েছিলেন ‘পিটার’। সেইন্ট পিটার চার্চের প্রধান হওয়ার আগেই নাম পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। পোপদের নাম পরিবর্তনের প্রথা শুরু হয় প্রায় ৫০০ বছর পর, পোপ দ্বিতীয় জনের মাধ্যমে, যিনি তাঁর জন্মগত নাম ত্যাগ করেন। দশম শতাব্দীতে পিটার ক্যানেপানোভা দ্বিতীয় পিটার হওয়া এড়াতে ‘চতুর্দশ জন’ নাম নেন। এর পর থেকে ভিন্ন নাম রাখা সাধারণ রীতি হয়ে ওঠে। বিশেষত ভিনদেশি পোপদের মধ্যে। পূর্বসূরিদের সম্মান জানাতে ইতালীয় নাম গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। ষোড়শ শতাব্দীতে দ্বিতীয় মার্সেলাস ও ষষ্ঠ অ্যাড্রিয়ান ব্যতিক্রম ছিলেন, যাঁরা তাঁদের আসল নামই ব্যবহার করেছেন।

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল। রোম, ইতালি
ছবি: রয়টার্স
আরও পড়ুন

পোপদের ১৩টি নামের প্রতিটি নামের নিজস্ব ইতিহাস ও অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে, যা সেই নাম বহনকারী পূর্ববর্তী পোপদের সাফল্য অথবা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। যেমন পোপ ফ্রান্সিস আসিসির সেন্ট ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর নাম ফ্রান্সিস বেছে নেন। ফ্রান্সিস ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী ও শান্তিপ্রিয়। তিনি দরিদ্রদের প্রতি যত্ন ও সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

পঞ্চম শতাব্দীতে দায়িত্ব পালন করেন প্রথম পোপ লিও, যিনি ‘লিও দ্য গ্রেট’ নামে পরিচিত। তিনি রোমান সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। তাঁকে স্মরণ করেই এই নাম নিয়েছেন এখনকার পোপ। লিও নামটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘সিংহ’ থেকে, যা শক্তি ও সাহসের প্রতীক।

সূত্র: সিএনএন, এডাডেরন ডটকম

আরও পড়ুন