স্কুল পরীক্ষা হোমওয়ার্ক এসব কোথা থেকে এল

ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

পৃথিবীতে যত প্রাচীন পেশা আছে, শিক্ষকতা তার মধ্যে একটি। হাজার বছর আগে শিক্ষা নেওয়ার জন্য শিশুরা শিক্ষকদের কাছে যেত। সারা বিশ্বেই প্রাচীন সমাজে শিক্ষা অর্জনের গুরুত্ব ও শিক্ষকদের মর্যাদা ছিল অনেক বেশি।

এই শিক্ষকেরা নিজেদের বাসায় একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেন। আসলে এগুলো ছিল একধরনের স্কুল। এমনকি প্রাচীন বাংলাদেশেও বড় আকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। সে সময় বৌদ্ধবিহারগুলো ছিল এ রকম একেকটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে কেবল ধর্ম নয়, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদিও শেখানো হতো, প্রাচীন আমলে এই উপমহাদেশের অনেক জায়গার মতো বাংলাদেশেও ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা স্কুল। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সীতাকোট বিহার, যা দিনাজপুরে অবস্থিত, আর সবচেয়ে বিখ্যাত নওগাঁ জেলার সোমপুর বিহার।

তবে আধুনিক সময়ে আমরা যে স্কুলে পড়ি সেটার ইতিহাস আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একটু আলাদা

আরও পড়ুন

কোথা থেকে এল স্কুল

ইংরেজি স্কুল শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক ‘এসখোলা’ শব্দটি থেকে। গ্রিক ভাষায় যার মানে ছিল অবসর সময়, অলস সময়। মানে শিক্ষা, জ্ঞান ও আলোচনার জন্য প্রাচীন গ্রিসে যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল, সেগুলোই এসখোলা।

শব্দটি এই ধারণা দেয় যে প্রাচীন গ্রিসে তারাই স্কুলে যেত, যাদের তেমন কাজ ছিল না। এই এসখোলা শব্দটি ল্যাটিন স্কোলা হয়ে আধুনিক ইংরেজি শব্দ স্কুলে পরিণত হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বর্তমানে স্কুল শব্দের মানে কিন্তু বেশ কয়েকটি, ইংরেজি ভাষায় সাধারণত স্কুল মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশে আবার স্কুল মানে ছোটদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বড়দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলেজ, আর তারচেয়ে বড়দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি বা বিশ্ববিদ্যালয়। আমেরিকায় যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল বলার রীতি আছে। যদি কোনো আমেরিকান বলে কেমব্রিজ আর হার্ভার্ড দুটি বিখ্যাত স্কুল, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে তারা হার্ভার্ড আর কেমব্রিজ নামের দুটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছে।

আবার যুক্তরাজ্য নামে পরিচিত ব্রিটেনে অনেক সময় স্কুল মানে ‘সময়’ অথবা কোনো বার অথবা একটি নির্দিষ্ট সময়। সেখানে কেউ যদি বলে এখানে সপ্তাহে গণিত এর দুটি স্কুল হয়। তার মানে প্রতি সপ্তাহে কোনো নির্দিষ্ট দুটি দিনে দুইবার গণিতের ক্লাস নেওয়া হয়।

আবার স্কুলের একটি মানে বাংলায় বলতে পারো ঘরানা। মানে ধারাবাহিকভাবে বা বংশপরম্পরায় চলে আসা জ্ঞান বা শিক্ষা। বিষয়টি অনেকটা এ রকম, একজন ওস্তাদের কাজ থেকে শেখে তাঁর শিষ্য। সে আবার তার শিষ্যদের সেটা শেখায়। এভাবে চলতে থাকে লম্বা সময়।

তবে এখন সারা বিশ্বের সবাই এখন স্কুল বলতে একবাক্যে বুঝে নেবে যে সেটা একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর সেটা অবশ্যই ছোটদের।

আরও পড়ুন

পৃথিবীর প্রথম স্কুলের বয়স কত

এখন থেকে প্রায় ৩০০০ বছরেরও আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া বা আধুনিক ইরাকে প্রথম স্কুলের সূচনা হয়। এরপর ২৫০০ বছর আগে স্কুলের যাত্রা শুরু হয় মিসরে।

এর প্রায় কাছাকাছি সময়ে ভারত ও চীনে স্কুলের উদ্ভব হয়েছিল। তবে চীনারা স্কুলের চিন্তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। প্রাচীন ইরাক, মিসর বা ভারতে স্কুল হতো শিক্ষকের বাসা। আর চীনাদের স্কুল ছিল আধুনিক স্কুলের মতো, যেখানে শিক্ষকেরা এসে শিক্ষা দিতেন। শুধু তা–ই নয়, সে সময় চীনে দুই ধরনের স্কুল ছিল। একটি ধনীদের জন্য, অন্যটি দরিদ্রদের জন্য। অভিজাতদের স্কুল রাজারা চালাতেন, আর গরিবদের স্কুল চালাত ছাত্রছাত্রীর মা–বাবা।

আরও পড়ুন

এখনো টিকে আছে যে সবচেয়ে প্রাচীন স্কুল

চীনে যীশুর জন্মের ১৪৩ বছর আগে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যার নাম ছিল শিশি স্কুল। চীনের চেংডুতে অবস্থিত এই স্কুলটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো স্কুল, যা এখনো টিকে আছে।

১২ বছর ধরে স্কুল পড়ার নিয়ম

আগে স্কুলে যে বেশি ভালো করত, সে স্কুল শেষ করে বের হয়ে যেত। আর এর কোনো বিশেষ নিয়ম ছিল না। বর্তমানে একটি শিশু সাধারণত দশম শ্রেণি শেষ করে কলেজে যায়। এরপর কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ নেয়।

প্রথম থেকে ১২ ক্লাস সবার জন্য পড়ার আইডিয়া দেন হোরাসে মান নামের একজন শিক্ষাবিদ। হোরাসে মান ছিলেন আমেরিকার একজন শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সমাজ সংস্কারক ও রাজনীতিবিদ। ১২ বছর স্কুলে পড়ার যে সাধারণ নিয়ম সেটার কৃতিত্ব এই শিক্ষাবিদকে প্রদান করা হয়।

হোরাসে মান শিক্ষা সংস্কারের অংশ হিসেবে এই ১২ বছরের শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেন যাতে শিক্ষার্থীরা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষা লাভ করে।

আরও পড়ুন
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রথম গ্রেড বা মার্কিং সিস্টেম

১৭৯২ সালে উইলিয়াম ফারিস বলে একজন শিক্ষক প্রথম মার্কিং বা গ্রেডিং সিস্টেম চালু করেন। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষকের উদ্দেশ্য ছিল মার্ক প্রদান বা গ্রেডিং সিস্টেমের মাধ্যমে অল্প সময়ে বেশি বেশি ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা।

হোমওয়ার্ক কে আবিষ্কার করেছিল

যদিও এই নিয়ে অনেকের মতো আলাদা, তবে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন প্রথম হোমওয়ার্ক আবিষ্কার করেন রবার্ট নেভিল। ১৯০৫ সালে ইতালির ভেনিস নগরের এই শিক্ষক নাকি দুষ্টু শিশুদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পড়া লিখে আনতে বলতেন। আবার অনেক মনে করেন যে শিশুরা যাতে পড়ায় দক্ষ হয়ে ওঠে, সে জন্য হোমওয়ার্ক দিতেন নেভিল।

তবে অনেক ইতিহাসবিদের মতে আসলে রবার্ট নেভিল বলে কেউ ছিল না, এটা তাদের কল্পনা, যারা হোমওয়ার্ক ভীষণ অপছন্দ করে।

আরও পড়ুন