টি-রেক্স রহস্য (ষষ্ঠ পর্ব)

অলংকরণ: সাদাত

ছয়

বাড়ি ফেরার পথে ছেলেরা চুরিটা নিয়ে কথা বলল।

হঠাৎই থমকে দাঁড়াল মুসা। কালো চোখের মণিতে ধূর্ততার ছায়া।

‘জেনে ফেলেছি কে টাকা চুরি করেছে,’ ফিসফিস করে বলল ও।

‘কে?’ কিশোরের জিজ্ঞাসা।

‘টিরোন!’ বলল মুসা, ‘সবাই যখন ঘুমিয়ে ও তখন ব্যাংকে গিয়ে একটা ডাইনো ডিপোজিট করেছে!’

মুসাকে ঠেলা দিল কিশোর। আর রবিন চোখ ওল্টাল।

বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে একসঙ্গে ফায়ারওয়ার্ক দেখতে যাবে ঠিক করল ওরা।

‘আমার বাসায় স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে চলে এসো,’ বলল কিশোর, ‘চাচা-চাচি বলেছেন ফায়ারওয়ার্কের পর বাইরে ঘুমোতে পারি আমরা।’

‘কালো পোশাক পরব, ঠিক আছে?’ বলল মুসা।

‘আমরা পৌঁছে যাব,’ বলল কিশোর। বড়দের সঙ্গে যোগ দিতে হাঁটা ধরল তিন গোয়েন্দা। টেনিস কোর্টের কাছে একটা জায়গা বেছে নিল ওরা। এখান থেকে তিন যুবকের ওপর চোখ রাখতে পারবে।

সাড়ে আটটায় মুসা আর রবিনের পরিবার মিলিত হলো কিশোরদের বাসায়। পিকনিক টেবিলের ওপর স্লিপিং ব্যাগ স্তূপ করে রেখেছে তিন বন্ধু। বড়রা এনেছেন ব্ল্যাংকেট, পপকর্ন আর বাগ স্প্রে।

তিনটি পরিবার মেইন স্ট্রিটে হেঁটে গিয়ে বাঁয়ে মোড় নিল। বাঁয়ে আরেকটা মোড় ঘুরে সুইমিংপুলের দিকে পা চালাল। ওখানেই ফায়ারওয়ার্ক সেটআপ করা হয়েছে।

‘তোমরা তিনজন কালো ড্রেস পরেছ কেন?’ মি. মিলফোর্ড প্রশ্ন করলেন। ‘তোমাদের নিনজার মতো লাগছে।’

‘মশা যাতে না কামড়ায় সে জন্য,’ বলল রবিন। কিশোরের দিকে তাকাল।

অন্যদের পেছনে নিয়ে হাঁটছে তিন গোয়েন্দা।

‘ভালো বলেছ,’ কেউ শুনছে না নিশ্চিত হয়ে বলল মুসা।

একটু পরে, সবাই হাজির হলো টাউন পুলে। কয়েক শ লোক ইতিমধ্যে জড়ো হয়েছে। পুলের কাছে, টেনিস কোর্ট ও বেসবল মাঠে ব্ল্যাংকেট আর চেয়ারের ছড়াছড়ি।

ফায়ার ট্রাক কাছেই পার্ক করা, যদি দরকার পড়ে।

‘টনি, জন আর রয়কে দেখতে পাচ্ছি,’ বলল মুসা।

বেসবল মাঠ ঘিরে রাখা ফেন্সে হেলান দিয়ে বসা ওরা। ‘চলো ওদের সাথে বসি।’

‘তা সম্ভব নয়,’ বলল রবিন, ‘পরে আমাদের পালাতে হবে না?’

‘তাহলে অন্তত হাই বলি চলো,’ বলল কিশোর।

‘হ্যাঁ, জনকে অপরাধী মনে হয় কি না, সেটাও দেখা যাবে,’ মন্তব্য করল মুসা।

ছেলেরা ব্ল্যাংকেট আর চেয়ার এড়িয়ে পথ করে নিল। টনি সবার আগে ওদের দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়াল।

‘হাউডি,’ হাত নেড়ে বলল ও, ‘আমাদের সাথে বসবে?’ রয় আর জনও ‘হাই’ বলল, কিন্তু উঠে দাঁড়ায়নি।

‘ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পারব না,’ বলল মুসা, ‘বাবা-মার সাথে থাকতে হবে।’

‘অফিসার ফলেট ভালো মানুষ,’ বলল টনি, ‘আমার বিশ্বাস উনি টাকাটা বের করতে পারবেন। আমরা টিরোনকে নিয়ে কাল চলে যাচ্ছি।’

‘কোথায়?’ প্রশ্ন করল রবিন।

‘প্রথমে নিউ হ্যাভেন, তারপর অন্যান্য শহরে,’ বলল রয়, ‘আমাদের আরও অনেক টাকা কামাতে হবে তো।’

জন আলোচনায় যোগ দিল না। ওর চোখজোড়া সামনের দিকে স্থির।

‘গুড ইভনিং,’ একটি কণ্ঠ বলল। শাংরি-লা হোটেলের ম্যানেজার মি. লিস্টার। কয়েক ফিট দূরে এক লন চেয়ারে বসে আছেন তিনি। সবাই হাই বলল, ‘রুমটা কমফোর্টেবল লাগছে তো?’ টনি আর রয়ের উদ্দেশে বললেন মি. লিস্টার।

‘চমৎকার,’ জবাব দিল টনি।

ঠিক এ সময় মাথার ওপরে আকাশ নীল আলোয় আলোকিত হয়ে গেল।

‘উহ!’ চেঁচিয়ে উঠল দর্শকেরা।

‘ওরা শুরু করছে!’ বলল রবিন, ‘আমরা যাই।’

‘কালকে কেলির ওখানে ব্রেকফাস্ট করলে কেমন হয়?’ টনি প্রশ্ন করল, ‘তোমাদের সাথে দেখা না করে যেতে চাই না।’

‘ঠিক আছে। কখন?’ বলল কিশোর।

‘আমাদের ভোরে উঠতে হবে টিরোনকে পার্ট পার্ট করে ট্রাকে তোলার জন্য,’ বলল টনি, ‘নয়টা হলে কেমন হয়?’

‘আমরা পৌঁছে যাব,’ বলল কিশোর। বড়দের সঙ্গে যোগ দিতে হাঁটা ধরল তিন গোয়েন্দা। টেনিস কোর্টের কাছে একটা জায়গা বেছে নিল ওরা। এখান থেকে তিন যুবকের ওপর চোখ রাখতে পারবে।

‘টনি কী বলল শুনেছ?’ প্রশ্ন করল রবিন, ‘কালকে টিরোনকে টুকরা টুকরা করবে ওরা!’

‘কাজেই জন যদি ওখানে টাকা লুকিয়ে রেখে থাকে, তবে তার আগেই ওকে সেটা সরাতে হবে,’ বলল মুসা।

‘কথাটা অন্য কারও বেলাতেও খাটে,’ যোগ করল কিশোর।

‘জনই চোর, আমি তো বলছি,’ বলে চলল মুসা, ‘ও কীভাবে চুপচাপ বসে ছিল দেখোনি? ও-ই দোষী।’

ছেলেরা আরও কিছুক্ষণ ফায়ারওয়ার্ক দেখল। মাথার ওপরে আকাশ নানা রং ধারণ করছে—কালো, লাল, সাদা, নীল। জনতা হাততালি, শিস দিচ্ছে, চেঁচাচ্ছে।

‘আমাদের সটকাতে হবে,’ গলা খাদে নামিয়ে বলল মুসা, ‘বড়সড় একটা ছুড়লেই।’

একটু পরে হলদে আলো ছড়িয়ে পড়ল আকাশে। সবাই চোখ তুলে দেখছে, আলগোছে সরে পড়ল তিন বন্ধু।

ইস্ট গ্রিন স্ট্রিট ধরে ছুট দিয়ে হাইস্কুলের লনে চলে এল ওরা।

চাঁদের আলোয় ডাইনোসরটার ছায়া বিস্তার পেয়েছে খেলার মাঠের মাঝামাঝি অবধি। ওদের পেছনে আকাশ তখন আলোকিত। বাতাসের দোলায় স্টেকের গায়ে পতপত করে বাড়ি খাচ্ছে হলদে টেপ।

‘এখন কী?’ প্রশ্ন করল কিশোর, ‘এখানে আসতে চাইনি আমি, শুধু তোমাদের জন্য এলাম।’

‘আমিও,’ বলল রবিন, ‘কিন্তু ডাফেল ব্যাগটা যদি এখনো টিরোনের ভেতর থেকে থাকে তবে আজ রাতেই ওটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে!’

চলবে...

আরও পড়ুন