পাঁচ
তিন বন্ধু তিন যুবককে পুলিশ স্টেশনের দিকে যেতে দেখল। ওদের মাথার ওপর দিয়ে টিরোন বড় বড় প্লাস্টিকের চোখ মেলে তাকিয়ে আছে।
‘কী বিশ্রী ব্যাপার!’ বলল কিশোর, ‘টনি এল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আর ওর টাকা কিনা খোয়া গেল।’
‘কেউ কাজটা করল কীভাবে, মাথায় আসছে না,’ রবিন বলল, ‘কাল বিকেলে আমরা সবাই এখানে ছিলাম, আর জন টিরোনকে রাত্রিবেলা পাহারা দিয়েছে। তা ছাড়া, শোর সময় ও টিরোনের ভেতর বন্ধ অবস্থায় ছিল।’
‘হয়তো জনই চোর,’ বলল মুসা, ‘কাল রাতে বা আজ শোর সময় হয়তো কাজটা করেছে। দরজা বন্ধ হওয়ার পর ও কী করেছে, কেউ জানে না।’
‘কিন্তু আমরা তো জানি ও কী করেছে,’ বলল কিশোর, ‘কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছিল, নইলে টিরোন নড়ত না, কথাও বলত না।’
‘তা ঠিক,’ বলল মুসা, ‘টিরোন প্রথমে কয়েক মিনিট নড়েনি, মনে আছে? জন তখন হয়তো ডাফেল ব্যাগটা সরাচ্ছিল!’
মাথা নাড়ল কিশোর।
‘জন ওর প্রিয় বন্ধুর টাকা চুরি করবে বলে মনে হয় না।’
ঠিক এ সময় অফিসার কিন তাঁর ক্রুজারে চেপে পৌঁছালেন। একগাদা হলদে টেপ আর কাঠের কটা স্টেক নিয়ে নেমে এলেন গাড়ি থেকে।
‘হাই, কিডস,’ বললেন তিনি, ‘উত্তেজনার খোরাক পাওয়া গেছে, তা–ই না?’
টেপ আর স্টেকগুলো মাটিতে নামিয়ে রেখে টিরোনের কাছে হেঁটে এলেন অফিসার কিন। ওয়েজটা তখনো যথাস্থানে ছিল, দরজাটা আরেকটু ফাঁক করার সুযোগ দিল তাঁকে। ভেতরে উঁকি দিলেন তিনি।
‘বাপ রে, ভেতরে তো পাই বেক করা যাবে,’ বললেন অফিসার কিন।
‘ব্যাপারটা এ রকম ঘটেছে,’ বলল ও, ‘জন টিরোনের ভেতর ছোট্ট খুপরিটা বানিয়েছে, তা–ই তো বলেছে? ও যদি ও রকম আরেকটা খুপরি বানিয়ে থাকে, যেটার কথা শুধু ও-ই জানে? টাকাগুলো যদি ওখানেই লুকিয়ে রেখে থাকে!’
টিরোনকে ঘিরে মাটিতে স্টেক গুঁজতে শুরু করলেন অফিসার কিন। এবার স্টেকগুলোয় ক্রাইম-সিন টেপ দিয়ে ঘিরে দিলেন ডাইনোসরটাকে।
‘চলো, কেলির ওখানে যাই,’ বলল মুসা, ‘আমার মগজ একটা ড্রিঙ্ক চাইছে।’
সেন্টার পার্কের ভেতর ঢুকে পড়ল ছেলেরা। হাঁটছে।
‘জনকে তোমার সত্যিই চোর মনে হয়?’ মুসাকে প্রশ্ন করল রবিন।
‘হ্যাঁ,’ জানাল মুসা, ‘ওর কাছে চাবি আছে, আর টাকা কোথায় লুকানো থাকে, তা–ও ওর জানা।’
‘রয়ের ব্যাপারে কী ভাবছ? ও টনি কিংবা জনের চাবি দিয়ে কাজটা করতে পারে না?’ প্রশ্ন করল নথি।
‘করার সুযোগ থাকলে ওরা অফিসার ফলেটকে কথাটা জানাত,’ বলল মুসা।
‘চোর অন্য কেউও তো হতে পারে,’ বলল কিশোর, ‘ডালা খুলতে জানে এমন কেউ।’
‘কিন্তু জন বাইরে ঘুমাচ্ছিল,’ বলল রবিন, ‘ওর পাশ দিয়ে চোর আসবে কীভাবে?’
‘সে জন্যই আমি জনকে সন্দেহ করছি,’ বলে কেলিস ডাইনারের দরজা টেনে খুলল মুসা।
জানালার কাছে একটা জায়গা দখল করল ওরা। একটা টিরোন ফ্লায়ার টেপ দিয়ে কাচে সাঁটা। কেলি হাত নেড়ে এগিয়ে এল।
‘হাই,’ কেলি বলল, ‘ডাইনোসর শো দেখতে যাওনি?’
‘শো শেষ,’ বলল মুসা, ‘কিন্তু ওদের টাকা চুরি গেছে।’
মুসার পাশে বসল কেলি।
‘কে কার টাকা চুরি করল?’
রবিন টিরোনের পেটে লুকানো টাকার কথা জানাল।
‘আহা রে বেচারারা,’ উঠে দাঁড়িয়ে বলল কেলি, ‘আজ সকালে নাশতা করতে এসেছিল। তখন কী আনন্দিত দেখাচ্ছিল ওদের!’
‘অফিসার ফলেট কেসটা দেখছেন,’ রবিন বলল।
‘গুড! মুসা, তোমার তো জিব বেরিয়ে পড়েছে। ফ্রেশ লেমোনেড হলে কেমন হয়?’ জিজ্ঞেস করল কেলি।
ছেলেরা সায় জানালে তিনটা উঁচু গ্লাস নিয়ে এল কেলি।
স্ট্র দিয়ে লম্বা টান দিল মুসা।
‘তো তোমরা আমার সঙ্গে একমত যে জনই চোর?’
লেমোনেড নাড়ল কিশোর।
‘আমি নই। যে পাহারার দায়িত্বে ছিল, সে এত বোকা নয় যে চুরি করবে,’ বলল ও, ‘সে ক্ষেত্রে আঙুল তো ওর দিকেই উঠবে।’
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
‘ও শোর সময় ডাফেল ব্যাগটা নিয়ে থাকতে পারে,’ বলল মুসা।
‘কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।
‘খুব সহজ,’ বলল মুসা, ‘নিজেকে ও টিরোনের ভেতর লক করে। টেবিল আর কার্পেট সরায় ও, ডাফেল ব্যাগটা নিয়ে, কার্পেট আর টেবিল জায়গামতো রেখে দেয়। মাত্র এক মিনিটের কাজ।’
‘তারপর? ডাফেল ব্যাগটা কোথায় রাখল?’ জবাব চাইল কিশোর।
মুসার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ও আর রবিন, জবাব আশা করছে।
চোখ পিটপিট করল মুসা। চুমুক দিল লেমোনেডে।
‘ব্যাপারটা এ রকম ঘটেছে,’ বলল ও, ‘জন টিরোনের ভেতর ছোট্ট খুপরিটা বানিয়েছে, তা–ই তো বলেছে? ও যদি ও রকম আরেকটা খুপরি বানিয়ে থাকে, যেটার কথা শুধু ও-ই জানে? টাকাগুলো যদি ওখানেই লুকিয়ে রেখে থাকে!’
মুসার দিকে তাকাল কিশোর।
‘তুমি ভাবছ, টাকা এখনো টিরোনের ভেতরই রয়েছে?’
‘হতেই পারে,’ বলল মুসা, ‘কেউ তো ওখানে খুঁজবে না।’
রবিন তাকাল মুসার দিকে।
‘তোমার মতো খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষ ছাড়া।’
‘চলো, টিরোনের ভেতরটা খুঁজে দেখি আমরা,’ লেমোনেড শেষ করে বলল মুসা, ‘আমার ধারণা যদি ঠিক হয়, তাহলে প্রথম সুযোগেই ব্যাগটা হাতিয়ে নেবে জন।’
‘মুসার কথায় কিন্তু যুক্তি আছে,’ বলল রবিন, ‘খুঁজে দেখতে অসুবিধা কী?’
ছেলেরা টেবিলে টাকা রেখে, কেলির উদ্দেশে হাত নেড়ে, ফিরে চলল হাইস্কুলের দিকে।
একটু পরে, হলদে ক্রাইম-সিন টেপ দিয়ে ঘেরা টিরোনের দিকে তাকিয়ে রইল তিন বন্ধু। অফিসার কিন চলে গেছেন।
‘টেপের ভেতরে যাওয়া বেআইনি,’ বলল কিশোর।
‘আমরা বলব, দেখিনি,’ বাতলে দিল মুসা।
‘হ্যাঁ, ঝকঝকে দিনের আলোয় হলদে টেপ চোখে পড়েনি তিনজনের কারোরই,’ বলল কিশোর।
‘আমরা রাতে আসতে পারি না?’ রবিন বলল।
মাথা নাড়ল কিশোর।
‘আজ রাতে আমরা বড়দের সঙ্গে ফায়ারওয়ার্ক দেখতে যাচ্ছি।’
মুসা এক হাত দিয়ে কিশোরের কাঁধ জড়িয়ে ধরল।
‘হ্যাঁ,’ বলল ও, ‘সবার চোখ যখন আকাশের দিকে, তখন আমরা লুকিয়ে এখানে চলে আসতে পারি।’
শেষমেশ সায় জানাল কিশোর।
‘আমি রাজি হচ্ছি শুধু টনির জন্য,’ বলল ও।
এ সময় ছেলেদের কানে কুকুরের ডাক ভেসে এল। মি. প্যান্ট আর রুডকে পার্কের গোলাপঝাড় পরীক্ষা করতে দেখল ওরা। ‘হাই’ বলার জন্য হেঁটে ওদিকে গেল তিন বন্ধু।
‘ডাকাতির কথাটা শুনেছেন?’ রবিন প্রশ্ন করল।
‘হ্যাঁ, ছেলেগুলোর জন্য খারাপ লাগছে,’ বললেন মি. প্যান্ট, ‘কোনো সুরাহা হলো?’
মাথা নাড়ল কিশোর।
‘তবে আজ রাতে হতে পারে,’ বলে কিশোরকে আলতো কনুই মারল মুসা।
‘ঝাড়গুলো সুন্দর লাগছে,’ বললেন মি. প্যান্ট, ‘তবে এই মরা চারাটা সরাতে হবে। কিশোর, তুমি একটু হুইলবারোটা আনবে?’
শেডে দৌড়ে গেল কিশোর। ঠেলাগাড়িটা যেখানে রেখে গিয়েছিল, সেখানেই রয়েছে, বারল্যাপ ব্যাগগুলোর গায়ে ঠেস দেওয়া। কিশোর বেরিয়ে আসবে, কাদামাখা পায়ের ছাপ চোখে পড়ল ইটের ওপর।
ঠেলাগাড়িটা মি. প্যান্টের কাছে নিয়ে এল ও।
‘ধন্যবাদ,’ বলে মরা চারাটা ঠেলাগাড়িতে তুললেন মি. প্যান্ট, ‘এটাকে স্কুলের ডাম্পস্টারে ফেলে দেব।’ এবার রুডকে নিয়ে হেঁটে চলে গেলেন।
‘ওই যে টনি আর রয়!’ বলে ডাইনোসরটার দিকে আঙুল তাক করল মুসা।
ওরা দুজন ক্রাইম-সিন টেপের সীমানার বাইরে দাঁড়িয়ে। টনি কী সব বলছে আর টিরোনের এক পাশের একটা দরজার দিকে ইঙ্গিত করছে। জবাব দিচ্ছে রয়, মাথা নাড়ছে।
ছেলেরা কিছু শুনতে পেল না, দূরে রয়েছে। একটু পর দুই যুবক রয়ের গাড়িতে উঠে চলে গেল।
জন ওদের সঙ্গে ছিল না।
‘অফিসার ফলেট মনে হয় জনকে সাসপেক্ট হিসেবে আটকে রেখেছেন,’ বলল কিশোর। পেটের ভেতরের মিষ্টি লেমোনেড হঠাৎই তেতো লাগল ওর।
চলবে...