দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন যেসব ক্রিকেটার

এড জয়েসেরও শতক আছে দুটি দেশের হয়েফাইল ছবি: এএফপি

রস টেলর বা টিম ডেভিডের নাম শুনেছ? টিম ডেভিড তো এখন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের বড় ভরসার নাম। কিন্তু কিছুদিন আগেও তিনি খেলেছেন সিঙ্গাপুরের হয়ে। ২০২১ সালে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু তাঁকে দলে ভেড়ায়। তখনো তিনি সিঙ্গাপুরের খেলোয়াড়। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টিম ডেভিডের অভিষেক হয়। অর্থাৎ তিনি দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন।

আবার নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি খেলোয়াড় রস টেলরের নাম নিশ্চয়ই তোমরা শুনে থাকবে। ৪১ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৮ হাজারের বেশি রান করেছেন। এখন নাকি তিনি অবসর ভেঙে সামোয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলবেন। এ রকম আরও অনেক খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন। চলো, তাঁদের সম্পর্কে সংক্ষেপে জানা যাক।

এড জয়েসকে কি তোমরা চেনো? তিনি প্রথমে ইংল্যান্ডের হয়ে খেললেও পরে নিজের দেশ আয়ারল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামেন। তাঁর পুরো পরিবারটাই ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত! ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় এড জয়েসের। একই বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে করেন সেঞ্চুরি। এটাই ছিল ইংল্যান্ডের হয়ে তাঁর সেরা ইনিংসগুলোর একটি। কিন্তু ইংল্যান্ড দলে তিনি নিয়মিত জায়গা পাননি। তাই পরে আবার আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার অনুমতি চান। আয়ারল্যান্ডের হয়ে তিনি টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি—তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন। ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের হয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক প্রথম টেস্টেও খেলেছেন তিনি। বর্তমানে আয়ারল্যান্ড নারী দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এড জয়েস।

আরও পড়ুন
রনকির ওয়ানডেতে হাজারের বেশি রান আছে। ছবি: এএফপি

আবার লুক রনকির গল্পটাও কিন্তু অসাধারণ। ১৯৮১ সালে তাঁর জন্ম নিউজিল্যান্ডে। ২০০৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে খেলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর তিনিই নতুন উইকেটকিপার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ডানহাতি এই ব্যাটার। রনকি যেহেতু নিউজিল্যান্ডে জন্মেছেন, তাই আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার কয়েক বছর পর আবার নিউজিল্যান্ড দলে খেলার সুযোগ পান। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড দলে অভিষেক হয় তাঁর। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ফাইনালে উঠেছিল। সেই দলে ছিলেন রনকিও। ওয়ানডেতে তাঁর হাজারের বেশি রান আছে। টেস্টে আছে সেঞ্চুরি। তিনি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দুই দলের হয়েই ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন!

এ রকম আরও একজন ক্রিকেটার হলেন কোরি অ্যান্ডারসন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে একসময় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল তাঁর। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন এই অলরাউন্ডার। ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড দলে ছিলেন তিনিও। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২ হাজারের বেশি রান ও ৯০টি উইকেট আছে তাঁর। বর্তমানে এই অলরাউন্ডার যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কোরি অ্যান্ডারসন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে
আইসিসি

দক্ষিণ আফ্রিকার রুলফ ফন ডার মারউই দুই দেশের হয়ে খেলেছেন। প্রথমে নিজ দেশের হয়ে খেললেও এখন নেদারল্যান্ডসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক এই ক্রিকেটার বাঁ হাতে স্পিনও করতেন। ২০০৯ সালে প্রোটিয়াদের জার্সিতে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডেতে খেলার সুযোগ পান। ছোট ফরম্যাটে বেশি কার্যকর ছিলেন তিনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার দলে জায়গা পাওয়া সহজ ছিল না। ফলে তিনি নেদারল্যান্ডসে চলে যান। ডাচ নাগরিকত্ব পাওয়ার সুবাদে ২০১৫ সাল থেকে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে খেলা শুরু করেন। নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটে তিনি বড় তারকা। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নেদারল্যান্ডসের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এই অলরাউন্ডার। একসময় আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়েও তিনি খেলেছেন।

আরও পড়ুন

দলবদলের খেলায় নিউজিল্যান্ডের নাম যেন শেষই হয় না। তবে এবার নিউজিল্যান্ড ছেড়ে চলে যাননি, বরং হংকং ছেড়ে নিউজিল্যান্ড দলে যোগ দিয়েছেন একজন ক্রিকেটার। তাঁর নাম মার্ক চ্যাপম্যান। প্রথমে নিজ দেশ হংকংয়ের হয়ে খেললেও পরে বাবার দেশ নিউজিল্যান্ডে চলে আসেন। ২০১৪ সালে হংকংয়ের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওডিআইতে অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেটাই ছিল হংকংয়ের প্রথম ওডিআই সেঞ্চুরি। পরে নিউজিল্যান্ডে পড়াশোনা ও ক্রিকেট ক্যারিয়ার চালাতে থাকেন। বাবার নাগরিকত্ব সূত্রে কিউই দলে খেলার সুযোগ পান। ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তাঁর। এরপর ধীরে ধীরে তিনি কিউই দলের নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠেন।

নামিবিয়া অলরাউন্ডার ডেভিড ভিসা
আইসিসি

ডেভিড ভিসার কথা মনে আছে? নামের উচ্চারণটা একটু অদ্ভুত। David Wiese উচ্চারণ হলো ডেভিড ভিসা। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দল ছেড়ে তিনি বাবার দেশ নামিবিয়ার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সেই নামিবিয়া প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলে। এরপর ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের সঙ্গে কলপ্যাক চুক্তি করেন। মানে তিনি আর কখনো দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলবেন না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তই তাঁর ক্যারিয়ারে নতুন মোড় নেয়। ২০২১ সালে তিনি নামিবিয়ার জার্সিতে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন। ২০২১ সালে নামিবিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেন তিনি।

আরও পড়ুন

এমন আরও কিছু ক্রিকেটারের কথা সংক্ষেপে বলি। বাঁহাতি পেসার ডার্ক ন্যানেস প্রথমে নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলে রাতারাতি তারকা বনে যান। এক বছরের মধ্যেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে মাঠে নামেন!

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচ খেলা পেসার আমজাদ খান পরে নিজের দেশ ডেনমার্কের হয়ে খেলেন। আফগানিস্তানের হয়ে খেলা ইজাতুল্লাহ দৌলতজাই পরে মাঠে নামেন জার্মানির হয়ে। আবার ইংল্যান্ডের হয়ে ৩৪ ম্যাচ খেলা জেড ডার্নব্যাখ পরে ইতালির জাতীয় দলে যোগ দেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা হেডেন ওয়ালশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্টি থেরন এবং কানাডার নীতিশ কুমারও এখন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলেন।

এ ছাড়া এই তালিকায় আরও আছেন বয়েড র‍্যাঙ্কিন। তিনি একই সঙ্গে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। জেভিয়ার মার্শাল খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের জার্সিতে। মাইকেল রিপন নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। ড্যানিয়েল জাকিয়েল খেলেছেন জিম্বাবুয়ে ও মালাউইর হয়ে।

বুঝতেই পারছ, ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, এটা ভালোবাসার নাম। আর সেই ভালোবাসার টানেই খেলোয়াড়েরা এক দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশের হয়ে খেলেন।

আরও পড়ুন