টি-রেক্স রহস্য (সপ্তম পর্ব)
সাত
‘কাজটা সেরে ফেলা যাক,’ বলল মুসা, ‘পাঁচ মিনিট লাগবে। টাকাটা খুঁজে না পেলে ফিরে গিয়ে ফায়ারওয়ার্ক দেখব।’
হলদে টেপের নিচ দিয়ে সন্তর্পণে ভেতরে ঢুকল ওরা। টিরোনের কালো ছায়া ঢেকে রেখেছে ওদের। রবারের ওয়েজটা দরজাটাকে এক ইঞ্চি খুলে রেখেছে। মুসা ওটা সরিয়ে দরজা খুলে দিল।
‘কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না!’ বলল কিশোর, ‘আঁধারে কী খুঁজব আমরা?’
‘দাঁড়াও’ বলে পকেট থেকে খুদে এক ফ্ল্যাশলাইট বের করল রবিন। সুইচ অন করে, ভাঁজ করা সিঁড়ির পাশ দিয়ে আলো ফেলল টিরোনের পেটের ভেতর।
টেবিল আর কার্পেট এখনো এক পাশে সরানো। কম্পার্টমেন্টের ঢাকনা তোলা, ভেতরটা ফাঁকা। রবিন এবার বাতি বন্ধ করল।
সিঁড়িটা টেনে নামাল কিশোর এবং ওরা নেমে এল টিরোনের পেটে। কিশোর সিঁড়িটা ভাঁজ করতেই দরজা লাগিয়ে দিল মুসা।
অন্ধকার, গুমোট এক গুহায় এখন ওরা।
‘গরমে তো সেদ্ধ হয়ে গেলাম!’ আঁধারে অভিযোগ করল মুসা।
কিশোর বসেছে হাঁটুতে ভর দিয়ে। ছোট টেবিলটার ওপর রেখেছে একটা বাহু। ডাফেল ব্যাগের খুপরিটা সামনে, তবে দেখতে পাচ্ছে না।
‘কাজটা ঝটপট সেরে ফেলা যাক,’ বলল কিশোর, ‘চাচা-চাচি টের পাওয়ার আগেই ফায়ারওয়ার্কের ওখানে ফিরতে হবে।’
রবিন ফ্ল্যাশলাইট রেখে ছোট্ট খুপরিটার মধ্যে আলো ফেলল।
‘মুসা, তোমার গোপন কম্পার্টমেন্টটা দেখাও,’ বলল ও।
‘চোখের সামনে নিশ্চয়ই থাকবে না,’ বলল মুসা, ‘এমন জায়গায় খোঁজো, যেটার কথা কেউ ভাববে না।’
হাঁটু গেড়ে বসে পেছনের দুই পায়ের চারপাশটা হাতড়াতে লাগল কিশোর। বড় বড় বোল্ট দিয়ে বাকি দেহের সঙ্গে জোড়া ও দুটো।
‘পা–গুলো মনে হয় ফাঁপা,’ বলল ও।
মুসা হাতড়াতে হাতড়াতে একটা হাত ঢুকিয়ে দিল এক পায়ের মধ্যে।
‘এখানে কিছু নেই,’ জানাল।
অপর পা-টা খুঁজল কিশোর, কিন্তু ভেতরে কিছুই পেল না।
‘মাথার ভেতর নেই তো?’ রবিন বলল। টিরোনের বুক আর ঘাড়ের কাছে উঠে এল ওর ফ্ল্যাশলাইটের আলো। ওপরে একটা ফাঁকা গর্ত—মাথাটা যেখানে থাকে।
‘খুঁজে দেখা যাক,’ বলল কিশোর। উঠে দাঁড়িয়ে টিরোনের মাথার গর্তে হাত ভরার চেষ্টা করল, ‘নাহ, নাগাল পাচ্ছি না।’
‘এক সেকেন্ড,’ বলল মুসা। ল্যাপটপ কম্পিউটারটা টেবিল থেকে নামিয়ে মেঝেতে রাখল। এবার কিশোরের দিকে ঠেলে দিল টেবিলটা।
টেবিলে উঠে আবারও হাত বাড়াল কিশোর। এবার বাহু অবধি ঢুকে গেল টিরোনের মাথার মধ্যে। হাতটা নাড়াচাড়া করল ও।
‘শুধু কম্পিউটারের তারের গোছা,’ বলল ও, ‘তবে আমার হাত নিচ পর্যন্ত যাচ্ছে না।’
‘আমি ভেতরে ঢুকতে পারব?’ প্রশ্ন করল নথি।
‘মনে হয়,’ বলল কিশোর, ‘মাথাটা ফাঁপা।’
‘তোমার মাথার মতো,’ হেসে বলল মুসা।
‘আমাকে উঠতে দাও,’ বলল রবিন, ‘আমি টেবিলে দাঁড়াব, তারপর তোমরা আমাকে তুলে দেবে।’
জায়গা বদলে নিল কিশোর আর রবিন। মুখে ফ্ল্যাশলাইট ধরে রাখল মুসা। ও আর কিশোর রবিনকে ঠেলে তুলে দিল টিরোনের গলার কাছে। মাথার ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল রবিন, শুধু পা দুটি বেরিয়ে রইল। এবার পা উধাও হয়ে গেল এবং নিচের দিক থেকে ওর মুখ উঁকি দিল বন্ধুদের উদ্দেশে।
‘এখানে তারের সাথে জোড়া একটা ছোট স্পিকার ছাড়া কিছু নেই,’ বলল ও, ‘আর এক সার দাঁত।’
দেয়ালের চারধারে আলো বোলাল মুসা।
‘টাকা লুকানোর কোনো জায়গা তো দেখছি না,’ বলল ও।
‘তো কী করব আমরা?’ কিশোর প্রশ্ন করল।
‘আগে তাজা বাতাস নিয়ে নিই,’ বলল মুসা। কিশোরের হাতে ফ্ল্যাশলাইটটা দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াল।
ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করল কিশোর।
‘বেশি ফাঁক কোরো না। আমি ধরা পড়তে চাই না!’
মুসা দরজাটা ঠেলা দিল। নড়ল না ওটা।
‘হেল্প, কিশোর, দরজাটা আটকে গেছে।’
ছেলেরা দরজায় কাঁধ ঠেকিয়ে ধাক্কা দিল।
‘আমরা বন্ধ করার সময় মনে হয় লকড হয়ে গেছে,’ বলল মুসা, ‘রবারের জিনিসটা দিয়ে খোলা রাখতে ভুলে গেছিলাম আমরা!’
কিশোর ফ্ল্যাশলাইট অন করে আলোটা ধরল রবিনের উদ্দেশে।
‘এটা তোমাকে দিলে মুখের ভেতর দিয়ে আলো ফেলতে পারবে?’ প্রশ্ন করল, ‘চেঁচালে কেউ হয়তো শুনতে পাবে।’
মাথা নাড়ল রবিন।
‘মুখটা বন্ধ।’
‘আমাদের অন্য কিছু ট্রাই করতে হবে’ বলে ফ্ল্যাশলাইট দোলাল কিশোর, ‘আমি এখানে সারা রাত থাকব না!’
‘পেয়েছি,’ বলে উঠল মুসা, ‘জনের কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে। টিরোনের মুখ খোলা গেলে মাইক্রোফোন আর স্পিকার দিয়ে সাহায্যের জন্য চেঁচানো যাবে।’
‘ফায়ারওয়ার্কের যা শব্দ হচ্ছে, কেউ শুনবে না,’ বলল নথি, ‘তবে আমার মাথায় আরেকটা আইডিয়া এসেছে। তুমি টিরোনের মুখ খুলতে পারলে আমি বেরিয়ে আসতে পারি।’
‘রবিন, টিরোনের মাথাটা মাটি থেকে অনেক উঁচুতে,’ বলল কিশোর।
মুসার দিকে চাইল ও।
‘মই হিসেবে ব্যবহার করার মতো কিছু আছে?’
হঠাৎই কিশোরের হাত থেকে ফ্ল্যাশলাইটটা কেড়ে নিল মুসা। হুকগুলোর ওপর না পড়া পর্যন্ত দেয়ালে আলো বুলিয়ে গেল।
‘যা ভেবেছিলাম,’ বলল ও।
‘কী?’ কিশোরের প্রশ্ন।
মুসা হাত বাড়িয়ে এক গোছা দড়ি নিল।
‘এটা দিয়ে রবিনকে টিরোনের মুখ থেকে মাটিতে নামানো যায়!’
কিশোর রবিনের দিকে মুখ তুলে চাইল।
‘পারবে?’
মাথা ঝাঁকাল রবিন।
‘টিরোনের মুখ অনেক বড়।’
‘মুসার মুখের মতো,’ বলে বন্ধুর দিকে চেয়ে হাসল গোয়েন্দাপ্রধান।
‘খুব মজার কথা বলেছ,’ বিরস কণ্ঠে বলল মুসা। কিশোরকে ফ্ল্যাশলাইটটা দিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসে পড়ল। অন করে কয়েকটা কি চাপল।
স্ক্রিনে কয়েকটা আইকন ফুটে উঠল। একটায় লেবেল দেখা গেল—টিরোন। মুসা ওটাতে ক্লিক করতেই একটা উইন্ডো এল, কয়েকটা চয়েস নিয়ে। তার একটা শব্দ হলো ‘মাউথ’।
‘খাইছে, রেডি হও, রবিন,’ বলে উঠল মুসা।
মাউথ-এ ক্লিক করল মুসা। এক সেকেন্ড পর ঘরঘর করে একটা শব্দ শুনল কিশোর।
‘কাজ হয়েছে!’ চেঁচিয়ে উঠল রবিন, ‘টিরোনের মুখ খুলে যাচ্ছে!’