ভূতের সঙ্গে অঙ্কের খেলা: নারকেলগাছের নিচে
হঠাৎ সব শেষ হয়ে গেল। রোহান অপেক্ষা করল, কিন্তু সংখ্যার জগৎ থেকে তার সেই অদ্ভুত মেহমান আর এল না। রোহান রোজকার মতো ঘুমাতে যেত, স্বপ্ন দেখত। কিন্তু সেই স্বপ্নগুলোতে আর সোফার মতো বড় ক্যালকুলেটর বা লাফানো সংখ্যা দেখা যেত না।
একদিন সে স্বপ্ন দেখল, গভীর কালো গর্তে সে বারবার পড়ে যাচ্ছে। আরেক দিন দেখল একটা নোংরা ঘর, সেখানে পুরোনো স্যুটকেস থেকে পঙ্গপালের মতো লাল পিঁপড়া বেরিয়ে আসছে। দরজা বন্ধ, বের হওয়ার উপায় নেই। পিঁপড়াগুলো তার পায়ে উঠে আসছে। আরেক রাতে দেখল, তাকে একটা খরস্রোতা নদী পার হতে হবে, কিন্তু কোনো সেতু নেই। তাকে এক পাথর থেকে আরেক পাথরে লাফিয়ে যেতে হচ্ছে। ঠিক যখনই সে অপর পাড়ের কাছাকাছি পৌঁছাল, সব পাথর উধাও হয়ে গেল। সামনেও যাওয়ার উপায় নেই, পেছনেও না।
দুঃস্বপ্ন, শুধুই দুঃস্বপ্ন। সংখ্যার ভূতের কোনো দেখা নেই।
‘অন্য সময় আমি কী ভাবব তা আমি নিজেই ঠিক করতে পারি,’ মনে মনে বলল রোহান। ‘শুধু স্বপ্নের মধ্যেই যা আসে তাই মেনে নিতে হয়। কেন, কে জানে?’
‘জানো মা?’ এক সন্ধ্যায় সে তার মাকে বলল। ‘আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ থেকে আর কোনো স্বপ্ন দেখব না।’
‘শুনে খুশি হলাম, বাবা,’ বললেন মা। ‘রাতে ঠিকমতো না ঘুমালে তোমার মন বসে না, আর স্কুলে রেজাল্ট খারাপ হয়।’
অবশ্য স্কুলের রেজাল্ট নিয়ে রোহানের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু সে শুধু বলল, ‘শুভরাত্রি।’
সে জানে, মায়েদের সব কথা বলা যায় না।
কিন্তু চোখ বন্ধ করতে না করতেই আবার সব শুরু হলো। সে দেখল, একটা মরুভূমির ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কোথাও একটু ছায়া নেই, এক ফোঁটা পানি নেই। তার পরনে শুধু একটা সাঁতারের হাফপ্যান্ট। কী ভয়ংকর গরম! স্বপ্নের ঠিক এই জিনিসগুলোই সে ঘৃণা করে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ, ঘামে শরীর ভিজে গেছে, পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে; তবু সে হেঁটেই চলেছে। অবশেষে অনেক দূরে সে কয়েকটা গাছ দেখতে পেল।
হয়তো মরীচিকা অথবা মরূদ্যান, ভাবল রোহান। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সে প্রথম তালগাছটার কাছে পৌঁছাল। আর ঠিক তখনই একটা ডাক শুনতে পেল। খুব চেনা একটা গলা।
‘হ্যালো রোহান!’
সে ওপরে তাকাল। ঠিক তাই! তালগাছের পাতার ওপর দোল খাচ্ছে সেই সংখ্যার ভূত। মরুভূমিতে তাকে বেশ মানিয়েছে।
‘তৃষ্ণায় আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছে,’ বলল রোহান।
‘ওপরে চলে এসো,’ ভূতটা বলল।
শরীরের সবটুকু শক্তি জড়ো করে রোহান গাছের মগডালে উঠে পড়ল। তার বন্ধু তাকে একটা নারকেল দিয়ে স্বাগত জানাল। পকেট থেকে একটা ছুরি বের করে ওটার মুখে একটা ফুটো করে দিল। নারকেলের পানিটা ছিল অমৃতের মতো সুস্বাদু।
‘অনেক দিন দেখা নেই,’ বলল রোহান। ‘কোথায় ছিলে?’
‘একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম, বুঝতেই পারছ।’
‘আজকের কোনো প্ল্যান আছে?’
‘মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার পর তোমার কি একটু বিশ্রাম নিতে হবে না?’
‘ওহ, আমার চিন্তা কোরো না। আমি ঠিক আছি। কী ব্যাপার? মাথায় কোনো বুদ্ধি আসছে না বুঝি?’
‘আমার বুদ্ধির অভাব হয় না, বাছা।’
‘নিশ্চয়ই সংখ্যা নিয়ে কিছু একটা। সব সময় শুধু সংখ্যা।’
‘কী আর হবে? সংখ্যার চেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ আর কিছু নেই। এখন আমি চাই তুমি তোমার নারকেলটা নিচে ফেলে দাও।’
‘কোনো বিশেষ জায়গায়?’
‘না, শুধু নিচে।’
রোহান নারকেলটা বালুর ওপর ফেলল। ওপর থেকে ওটাকে একটা বিন্দুর মতো দেখাচ্ছে।
‘এবার আরেকটা,’ হুকুম দিল ভূতটা। ‘এবং আরেকটা। এবং আরেকটা।’
‘হেই, এসব কী হচ্ছে?’
‘শিগগিরই দেখতে পাবে।’
রোহান তিনটা নারকেল পেড়ে নিচে ফেলল। বালুর ওপর নারকেলগুলো দেখাল নিচের ছবির মতো:
‘চালিয়ে যাও,’ বলল ভূতটা।
রোহান ডাব ফেলতেই লাগল, ফেলতেই লাগল।
‘এখন কী দেখছ?’
‘ত্রিভুজ,’ বলল রোহান।
‘সাহায্য লাগবে?’ জিজ্ঞেস করল ভূতটা।
তারপর দুজনে মিলে নারকেল পাড়ল আর ফেলল, পাড়ল আর ফেলল, যতক্ষণ না নিচের দৃশ্যটা আরও পরিষ্কার ত্রিভুজের মতো দেখাল:
‘মজার তো! ওরা কেমন সুন্দর নকশা তৈরি করে ফেলছে,’ বলল রোহান।
‘অথচ আমি নিশানা করেও ফেলিনি। চেষ্টা করলেও আমি ওভাবে ফেলতে পারতাম না।’
‘স্বাভাবিক,’ বলল ভূতটা। ‘তুমি কেবল স্বপ্নেই এত নিখুঁত হতে পারো। অবশ্য গণিতেও পারো! মন দিলে গণিতের যেকোনো কিছুই সুন্দর পরিষ্কার নকশা তৈরি করতে পারে। যাহোক, আমাদের আসলে নারকেলের দরকার ছিল না। টেনিস বল হলেও চলত। বা বোতাম। চকলেট বা চেরিফল দিয়েও কাজটা চালানো যেত। কিন্তু এখন তুমি কি গুনে দেখবে যে প্রতিটি ত্রিভুজে কয়টা নারকেল আছে?’
‘ঠিক আছে। কিন্তু প্রথমটা তো ত্রিভুজই না। ওটা শুধু একটা বিন্দু।’
‘অথবা এমন একটা ত্রিভুজ, যা ছোট হতে হতে বিন্দু হয়ে গেছে।’
‘বুঝেছি, আমরা আবার আমাদের প্রথম বন্ধুর কাছে ফিরে এসেছি,’ বলল রোহান।
‘তারপর?’
‘দ্বিতীয় ত্রিভুজে তিনটা নারকেল, তৃতীয়টায় ছয়টা, চতুর্থটায় দশটা, আর পঞ্চমটায়... আমি নিশ্চিত না। দাঁড়াও। আমাকে গুনতে দাও।’
‘কেন? তোমার গোনার দরকার নেই। তুমি হিসাব করেই বের করতে পারো।’
‘না, আমি পারি না।’
‘হ্যাঁ, তুমি পারো। দেখো, প্রথম ত্রিভুজটা, যেটা এত ছোট যে আসলে ত্রিভুজ বলাই যায় না, সেটাতে আছে একটা নারকেল।
দ্বিতীয়টায় আরও দুটো বেশি। অর্থাৎ ১ + ২ = ৩টি নারকেল।
তৃতীয়টায় ঠিক তিনটা বেশি, অর্থাৎ ৩ + ৩ = ৬টি নারকেল।
চতুর্থটায় আরও একটা সারি আছে চারটা বেশি নিয়ে, অর্থাৎ ৬ + ৪ = ১০।
তাহলে পঞ্চমটায় কয়টা আছে?
এতক্ষণে রোহান চটপট বলে দিল: ১০ + ৫ = ১৫
‘আর নারকেল ফেলার দরকার নেই,’ সে বলল। ‘আমি বুঝতে পেরেছি কীভাবে কাজ করে। পরের ত্রিভুজটায় একুশটা নারকেল থাকবে; পাঁচ নম্বর ত্রিভুজের পনেরোটা, আর নতুন ছয়টা।’
‘বেশ,’ বলল ভূতটা। ‘এখন আমরা গাছ থেকে নেমে আরাম করে বসতে পারি।’
নিচে নামা ছিল একদম সহজ। মাটিতে নেমে তারা কী দেখল জানো? বিশাল এক সুইমিংপুলের পাশে নীলচে সাদা ডোরাকাটা দুটি ডেক চেয়ার আর দুটো গ্লাসে বরফশীতল কমলার জুস অপেক্ষা করছে। সংখ্যার ভূত কেন এই মরূদ্যানটা বেছে নিয়েছে এখন রোহান বুঝতে পারল। বিশ্রামের জন্য এর চেয়ে আদর্শ জায়গা আর হয় না।
‘এখন আমরা নারকেলের কথা ভুলে সংখ্যার দিকে মনোযোগ দিতে পারি,’ দুই গ্লাস খালি হওয়ার পর ভূতটা বলল। ‘এগুলো খুব বিশেষ সংখ্যা। এদের বলা হয় ত্রিভুজ সংখ্যা। আর তুমি যা ভাবছ তার চেয়ে অনেক বেশি আছে এগুলো।’
‘আমি ভেবেছিলাম, এগুলোর কোনো শেষ নেই,’ বলল রোহান। ‘তুমি তো চাও তোমার সংখ্যাগুলো অনন্তকাল চলতেই থাকুক।’
‘আচ্ছা, এবার নাহয় আমরা প্রথম দশটাতেই থাকি। দাও, আমি লিখে দিই।’ সে ডেক চেয়ার থেকে উঠল, তার লাঠিটা নিল, সুইমিংপুলের ধারে ঝুঁকে পানিতে নিচের সংখ্যাগুলো লিখল:
১ ৩ ৬ ১০ ১৫ ২১ ২৮ ৩৬ ৪৫ ৫৫ ...
আকাশ, বালু, পানি—কোথায় লিখছে তাতে ওর কিছু যায় আসে না, ভাবল রোহান। যতক্ষণ সংখ্যা লেখা হচ্ছে ততক্ষণই ও খুশি।
‘এই ত্রিভুজ সংখ্যাগুলো কী কী করতে পারে তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না,’ ভূতটা তার কানে ফিসফিস করে বলল।
‘পার্থক্যের কথা ভাবো, উদাহরণ হিসেবে।’
‘কীসের পার্থক্য?’
‘পাশাপাশি দুটো ত্রিভুজ সংখ্যার পার্থক্য।’
রোহান পানিতে ভাসমান সংখ্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবার চেষ্টা করল ভূতটা কী বোঝাচ্ছে।
১ ৩ ৬ ১০ ১৫ ২১ ২৮ ৩৬ ৪৫ ৫৫ ...
‘তিন বিয়োগ এক হলো দুই। ছয় বিয়োগ তিন হলো তিন। দশ বিয়োগ ছয় হলো চার। পনেরো বিয়োগ দশ হলো পাঁচ। এটা তো এক থেকে দশ পর্যন্ত গোনার মতো! দারুণ! বাজি ধরে বলতে পারি, এটাও ওভাবে চলতেই থাকবে।’
‘একদম ঠিক,’ ভূতটা আয়েশ করে হেলান দিয়ে বলল। ‘কিন্তু এটুকুই সব নয়! একটা সংখ্যা বেছে নাও, যেকোনো সংখ্যা। আর আমি দেখাতে পারব যে ওটা দুটি বা তিনটি ত্রিভুজ সংখ্যার যোগফল।’
‘বেশ, তাহলে,’ বলল রোহান। ‘একান্ন।’
‘সহজ! আমার শুধু দুটি সংখ্যা লাগবে’
৫১ = ১৫ + ৩৬
‘তিরাশি।’
‘সহজ’
৮৩ = ১০ + ২৮ + ৪৫
‘বারো।’
‘পানির মতো সহজ’
১২ = ১ + ১ + ১০
‘বুঝলে তো? এটা সব সময় কাজ করে। আর এখন সত্যি চমকপ্রদ কিছু দেখাই। প্রতিটি ত্রিভুজ সংখ্যার সঙ্গে তার পাশেরটা যোগ করো, দেখবে বিশ্বাসই হবে না কী পাওয়া যায়।’
রোহান পানিতে ভাসমান সংখ্যাগুলোর দিকে তাকাল:
১ ৩ ৬ ১০ ১৫ ২১ ২৮ ৩৬ ৪৫ ৫৫ ...
তারপর সে যোগ করতে শুরু করল:
১ + ৩ = ৪
৩ + ৬ = ৯
৬ + ১০ = ১৬
১০ + ১৫ = ২৫
‘আরে, এগুলো তো সব লাফানো সংখ্যা (পড়ো বর্গ সংখ্যা): ২২, ৩২, ৪২, ৫২।’
‘দারুণ, তাই না? আর তুমি এভাবে চালিয়ে যেতেই পারো।’
‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি,’ বলল রোহান। ‘আমি এখন সাঁতার কাটব।’
‘ঠিক আছে, শুধু আমাকে আরেকটা কৌশল দেখাতে দাও।’
‘কিন্তু আমার গরম লাগছে,’ গজগজ করল রোহান।
‘ঠিক আছে। তাহলে আমি চলি।’
এই রে, ও আবার কষ্ট পেয়েছে, ভাবল রোহান। আর আমি যদি ওকে যেতে দিই, তবে কপালে নির্ঘাত সেই লাল পিঁপড়ার স্বপ্ন জুটবে। তাই সে বলল, ‘না, না! আমাকে দেখাও!’
‘আহা! তুমি কৌতূহলী।’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। অবশ্যই!’
‘তাহলে ভালো করে খেয়াল করো। এক থেকে বারো পর্যন্ত সব সাধারণ সংখ্যা যোগ করলে কত পাওয়া যায়?’
‘হেঁ, এটা তো তোমার মতো কথা হলো না! এটা তো মিস্টার বাকেরের ক্লাসে জিজ্ঞেস করে।’ রোহান শঙ্কিত হয়ে ভূতের দিকে তাকাল।
‘ভয় নেই। ত্রিভুজ সংখ্যা দিয়ে এটা পানির মতো সহজ। শুধু বারো নম্বর সংখ্যাটায় যাও, তাহলেই তুমি এক থেকে বারো পর্যন্ত সংখ্যার যোগফল পেয়ে যাবে।’
রোহান আবার পানির দিকে তাকাল এবং গুনল:
১ ৩ ৬ ১০ ১৫ ২১ ২৮ ৩৬ ৪৫ ৫৫ ৬৬ ৭৮ ...
‘আঠাত্তর,’ বলল রোহান।
‘ঠিক।’
‘কীভাবে হলো?’
ভূতটা তার লাঠি তুলে লিখল:
‘আমি শুধু এক থেকে বারো পর্যন্ত সংখ্যাগুলোকে দুই সারিতে লিখেছি। প্রথম ছয়টা বাঁ থেকে ডানে, আর পরের ছয়টা ডান থেকে বাঁয়ে। মানে উল্টো করে। ওগুলোর নিচে দাগ টানো আর যোগ করো। কী পেলে?’
‘ছয়টি তেরো,’ বলল রোহান।
‘আশা করি এটার জন্য তোমার ক্যালকুলেটর লাগবে না।’
‘ছয় গুণ তেরো,’ বলল রোহান, ‘হলো আঠাত্তর। বারো নম্বর ত্রিভুজ সংখ্যা!’
‘দেখলে তো ত্রিভুজ সংখ্যা কী কাজের? আর হ্যাঁ, চতুর্ভুজ সংখ্যাগুলোও কিন্তু খারাপ না।’
‘আমি ভাবলাম আমরা সাঁতার কাটতে যাব।’
‘সাঁতার পরে। আগে চতুর্ভুজ সংখ্যা।’
রোহান করুণ চোখে সুইমিংপুলের দিকে তাকাল, যেখানে ত্রিভুজ সংখ্যাগুলো হাঁসের বাচ্চার মতো ভাসছে।
‘তুমি যদি এভাবে চালিয়ে যাও, তবে আমার ঘুম ভেঙে যাবে আর সব সংখ্যা উধাও হয়ে যাবে।’
‘সংখ্যা এবং পুল—দুটোই,’ বলল ভূতটা।
‘কিন্তু তুমি যখন খুশি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে পারো না। আর এখানকার বস কে? তুমি না আমি?’
আবার শুরু হলো, ভাবল রোহান। এবার ও মেজাজ খারাপ করছে। শিগগিরই হয়তো আমার ওপর চিৎকার শুরু করবে। মানলাম সব স্বপ্ন, কিন্তু কেউ আমার ওপর চিৎকার করুক এটা আমি স্বপ্নেও দেখতে চাই না। কে জানে, এবার ওর আস্তিনে কী লুকানো আছে।
ভূতটা কুলার থেকে কিছু বরফের টুকরা বের করল আর টেবিলে পাঁচটা নিখুঁত বর্গক্ষেত্র বা স্কয়ার সাজাল। একটার চেয়ে আরেকটা বড়।
‘বেশি সময় লাগবে না,’ রোহানকে খুশি করার জন্য সে বলল। ‘এটা নারকেলের মতোই, শুধু এবার আমরা ত্রিভুজের বদলে স্কয়ার ব্যবহার করছি।’
‘তোমাকে আর একটা কথাও বলতে হবে না। এটা একদম পরিষ্কার। এগুলো সব লাফানো বা বর্গ সংখ্যা। আমাকে শুধু এক পাশের কিউবগুলো গুনতে হবে আর সেটাকে লাফ দেওয়াতে হবে:
১ × ১ = ১২ = ১
২ × ২ = ২২ = ৪
৩ × ৩ = ৩২ = ৯
৪ × ৪ = ৪২ = ১৬
৫ × ৫ = ৫২ = ২৫
এভাবে চলবে, যথারীতি।’
‘খুব ভালো,’ বলল ভূতটা। ‘শয়তানি রকমের ভালো। না, আমাকে মানতেই হবে, তুমি একজন সেরা শিক্ষানবিশ।’
‘এখন কি আমি সাঁতার কাটতে পারি?’ রোহান মিনতির সুরে বলল।
‘কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই পঞ্চভুজ সংখ্যা কীভাবে কাজ করে তা শিখতে চাও। আর ষড়ভুজ সংখ্যাগুলো।’
‘ওহ, না, ধন্যবাদ,’ বলল রোহান।
সে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা পানিতে ঝাঁপ দিল।
‘দাঁড়াও, দাঁড়াও!’ ভূতটা চিৎকার করে উঠল। ‘পুলটা সংখ্যায় ভর্তি। দাঁড়াও আমি ওগুলো মাছের মতো ধরে ফেলি।’
কিন্তু ততক্ষণে রোহান ওগুলোর ভেতর দিয়ে সাঁতার কাটতে শুরু করেছে আর সংখ্যাগুলো তার চারপাশে ভাসছে। সে সাঁতরাতেই লাগল, সাঁতরাতেই লাগল, যতক্ষণ না সংখ্যার ভূতের কথা আর শোনা যায়। এই পুলটাও সংখ্যার মতোই অসীম, আর ঠিক ততটাই রোমাঞ্চকর!
শেষের আগে
…
তুমি যদি রোহানের মতো গরমে অস্থির না হয়ে থাকো, তবে গলে যাওয়ার আগেই কিউবগুলো নিয়ে একটু খেলতে পারো। স্কয়ারটাকে শুধু এভাবে ভাগ করো:
সংখ্যাগুলো তোমার টানা লাইনের ভেতরের কিউবের সংখ্যা বোঝাচ্ছে। ওগুলো যোগ করলে তুমি কী পাচ্ছ? উত্তরটা তোমার খুব পরিচিত লাগবে।