আট
কিশোর ফ্ল্যাশলাইটটা মেঝেতে রেখে দড়ির এক প্রান্ত বাঁধল ফোল্ডিং সিঁড়ির সঙ্গে। মুসা অপর প্রান্তে একটা লুপ তৈরি করল, রবিন যাতে ভেতরে ঢুকতে পারে। টেবিলে দাঁড়িয়ে রবিনকে লুপটা দিল ও।
‘ভয় পাচ্ছ না তো?’ প্রশ্ন করল কিশোর।
‘সোজা তো,’ বলল রবিন।
‘তুমি নামার জন্য রেডি না হওয়া পর্যন্ত আমরা দড়িটা ধরে রাখব,’ বলল মুসা, ‘দাঁতগুলো থেকে সাবধান!’
‘ওকে, আমাকে একটা মিনিট সময় দাও।’ রবিনের মুখটা অদৃশ্য হয়ে গেল। খানিকটা আলগা দড়ি ওর সঙ্গে নেমে গেল, ‘অলরাইট!’ চেঁচাল ও, ‘আমাকে আস্তে আস্তে নামাও।’
ছেলেরা অনুভব করল রবিনের ওজন চাপায় দড়িটা শক্ত ঠেকছে। আস্তে আস্তে দড়িটা ছাড়ছে ওরা। হাতের তালু জ্বলছে কিশোরের।
এবার দড়িটায় পুরোপুরি ঢিল পড়ল।
‘নেমেছে ও?’ প্রশ্ন করল মুসা।
দুজনই শুনতে পেল টিরোনের এক পাশের দরজায় কেউ ধুপধাপ শব্দ করছে।
‘আমি এখনই আসছি!’ চেঁচাল রবিন।
কিশোর আর মুসা বাঁকা এক দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসল। ফ্ল্যাশলাইটের আলো ম্লান হয়ে আসছে, তাই কিশোর ওটা বন্ধ করে দিল।
‘এখানে এয়ারকন্ডিশনার থাকলে ভালো হতো,’ বলল মুসা। টি-শার্ট দিয়ে মুখের ঘাম মুছল।
‘তোমার জন্য খাবারভর্তি ফ্রিজ থাকলে আরও ভালো হতো,’ ফুট কাটল কিশোর।
হেসে ফেলল মুসা।
ছেলেরা আঁধারে বসে রইল। চোখে ঘাম ঢুকছে টের পেল কিশোর।
‘সেদ্ধ হয়ে গেলাম,’ গুঙিয়ে উঠল মুসা।
‘একটু সহ্য করো,’ বলল কিশোর। একটু পরে, বাইরে একটা শব্দ হতে শুনল ওরা।
ঢোক গিলল মুসা।
‘জন টাকাটা নিতে আসেনি তো?’
কিশোর দরজার কাছে গিয়ে কান ঠেকাল। দরজাটা খুলে গেল এবং কিশোর আরেকটু হলেই টনির গায়ের ওপর পড়তে যাচ্ছিল।
‘ভালো বিপদেই পড়েছিলে তোমরা,’ বলে কিশোরের চোখে ফ্ল্যাশলাইটের আলো ফেললেন অফিসার ফলেট, ‘ভাগ্যিস টনিকে ফায়ারওয়ার্কের ওখানে পেয়েছিলাম।’
টনি সিঁড়িটা নামিয়ে দিল, কিশোর আর মুসা যাতে মাটিতে নেমে আসতে পারে।
‘ধন্যবাদ, ভেতরে গলে যাচ্ছিলাম,’ বলল মুসা।
‘রবিন আমাদের সব বলেছে,’ বলল টনি, ‘তোমরা টাকাটা খুঁজে পাওনি।’
মাথা নাড়ল কিশোর।
‘সরি।’
‘আমার ধারণা, চোর ব্যাগটা নিয়ে সটকে পড়েছে,’ বললেন অফিসার ফলেট।
মাথা ঝাঁকাল টনি।
‘ঘটনাটা ঘটেছে কাল রাতে আমরা ঘুমোতে যাওয়ার পর,’ বলল ও, ‘কিন্তু কীভাবে ঘটল বুঝতে পারছি না।’
অফিসার ফলেট তাঁর লাইটের আলো ফেললেন মাটিতে।
‘কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল,’ বললেন, ‘চোর যদি পায়ের ছাপও রেখে যেত, সেগুলো ধুয়েমুছে যেত।’
পায়ের ছাপ, ভাবল কিশোর।
‘গার্ডেন শেডে ভেজা পায়ের ছাপ দেখেছি আমি,’ বলল ও। আঁধার ভেদ করে গোলাপবাগানের দিকে আঙুল তাক করল, ‘মি. প্যান্টের জন্য আমি হুইলব্যারো আনতে গেছিলাম।’
‘তার মানে বৃষ্টির পর কেউ ওখানে ঢুকেছিল,’ বলল রবিন, ‘এবং সেটা মাঝরাতে!’
‘পায়ের ছাপগুলো হয়তো চোরের,’ বললেন অফিসার ফলেট। কিশোরের কাঁধে একটা হাত রাখলেন, ‘চলো, আমাকে দেখাবে।’
অন্ধকার লন পেরিয়ে দলটিকে পেছনে নিয়ে চলল কিশোর।
‘ওই যে,’ ছোট্ট গার্ডেন শেডটার কাছে পৌঁছে বলল ও।
‘তোমরা এখানে থাকো,’ মুসা, রবিন আর টনিকে উদ্দেশ করে বললেন অফিসার ফলেট। তাঁর ফ্ল্যাশলাইটের আলো স্ক্রুড্রাইভারটা খুঁজে নিল। ওটা সরিয়ে দরজা খুললেন তিনি। আলো ফেললেন মেঝের ওপর। কাদাটে, শুকনা পদচিহ্ন চলে গেছে দরজা থেকে শেডের পেছন পর্যন্ত।
‘এটা একটু ধরো’ বলে ফ্ল্যাশলাইটটা কিশোরের হাতে দিলেন অফিসার, ‘দরজার পাশে দাঁড়াও, যাতে আলোটা পাই আমি।’
অফিসার ফলেট ভেতরে পা রেখে পদচিহ্ন পরীক্ষা করতে হাঁটু গেড়ে বসলেন। এবার শেডের ভেতর হাঁটাহাঁটি করে একজন মানুষের লুকিয়ে থাকার উপযোগী সম্ভাব্য সব জায়গা নিরিখ করলেন।
শেডের পেছনে, ঠেলাগাড়িটা সরালেন তিনি। পায়ের পাতা দিয়ে খোঁচা দিলেন বারল্যাপ স্যাকগুলোর গায়ে। এবার কয়েকটা ব্যাগ সরিয়ে মেঝেতে রাখলেন।
কিশোর তাঁকে ঝুঁকে পড়ে অন্য ব্যাগগুলোর নিচ থেকে কিছু একটা বের করতে দেখল।
‘টনি, আপনি এখানে একবার আসুন,’ হাঁক ছাড়লেন।
দরজা দিয়ে মাথা গলিয়ে দিল টনি।
‘আপনারা কি এটাই খুঁজছেন?’
অফিসার ফলেটের হাতে কালচে-বাদামি এক ডাফেল ব্যাগ। পেট মোটা, মনে হয় ভেতরে কিছু আছে। এক পাশে লম্বা এক জিপার।
টনির মুখে হাসি ধরে না।
‘হ্যাঁ, এটাই তো আমাদের ব্যাগ!’ সোল্লাসে বলে উঠল।
অফিসার ফলেট শেড থেকে ব্যাগটা বের করে মাটিতে রাখলেন। ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় জিপারটা খুললেন তিনি। ভেতরে রবার ব্যান্ডে বাঁধা নোটের তাড়া।
অফিসার ফলেট মুখ তুলে চাইলেন টনির দিকে।
‘এটা কি আপনার টাকা?’ প্রশ্ন করলেন।
মাথা ঝাঁকাল টনি।
‘আশা করি পুরোটাই আছে।’
‘ওটা কী?’ জিজ্ঞেস করল কিশোর। ক্যানভাস ডাফেলের এক পাশ দিয়ে ম্লান সবুজ কিছু একটা বেরিয়ে রয়েছে।
‘ব্যান্ড-এইড,’ বলল রবিন।
‘ছুঁয়ো না,’ সাবধান করলেন অফিসার। পকেট থেকে ছোট্ট এক প্লাস্টিকের ব্যাগ বের করলেন। কলমের নিব দিয়ে খুঁচিয়ে ব্যাগের ভেতর ব্যান্ড-এইডটা ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলেন।
‘জিনিসটা কার হতে পারে?’ অফিসার বললেন। প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর আলো ধরলেন।
‘রয় কালকে এ রকম একটা ব্যান্ড-এইড পরেছিল,’ বলল রবিন, ‘গাড়ির রেডিয়েটরে আঙুল পুড়ে গিয়েছিল ওর।’
‘আমি জনের আঙুলেও ও রকম একটা দেখেছি,’ জানাল মুসা।
‘আমরা সবাই এগুলো ইউজ করি,’ বলল টনি। জিনসের পকেট থেকে একটা ব্যান্ড-এইড বের করল ও।
টনির ব্যান্ড-এইড আর ব্যাগের ভেতরেরটা অবিকল একই রকম।