টি-রেক্স রহস্য (নবম পর্ব)

অলংকরণ: সাদাত

নয়

‘আপনারা সবাই এই একই ব্যান্ড-এইড ইউজ করেন?’ অফিসার ফলেট টনিকে জিজ্ঞেস করলেন।

মাথা ঝাঁকাল টনি।

‘প্রায়ই আমাদের আঙুল কাটে,’ বলল টনি, ‘তাই আমি এক বাক্স ব্যান্ড-এইড কিনেছি। সবাই কয়েকটা করে পকেটে রাখি।’

অফিসার ফলেট ডাফেল ব্যাগটা একঝলক দেখে নিলেন।

‘ব্যাগটা শেষবার কার কাছে ছিল?’

‘টাকাটা শুধু আমিই ব্যাগে রাখি,’ জানাল টনি, ‘ব্যাগটা কম্পার্টমেন্টে রাখার সময় হয়তো আমার ব্যান্ড-এইড আঙুল থেকে খসে পড়ে গিয়েছিল।’

‘কিংবা হয়তো ব্যাগ চুরির সময় চোরের আঙুল থেকে ব্যান্ড-এইড খসে পড়েছে,’ বললেন অফিসার ফলেট, ‘সেটা যে কেউই হতে পারে।’ টনিকে খুঁটিয়ে লক্ষ করলেন।

কথা বলার আগে দুই মুহূর্ত ভেবে নিল টনি।

‘আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন চুরিটা করেছে বলে মনে হচ্ছে,’ বলল ও, ‘কিন্তু আমি তো চুরি করিইনি, জন আর রয় করেছে বলেও বিশ্বাস করি না।’

‘ডাকাত কি অন্য কেউ হতে পারে?’ কিশোর জবাব চাইল।

‘কিন্তু কে?’ প্রশ্ন করলেন অফিসার ফলেট, ‘টনি আর জন ছাড়া আর কারও কাছে তো ডাইনোসরের চাবি থাকে না।’

‘হ্যাঁ, কিন্তু জন আমার প্রিয় বন্ধু,’ বলল টনি।

ছোট ব্যাগ আর কলমটা পকেটে চালান করলেন অফিসার ফলেট।

‘জন আর রয়ের মধ্যে কার পক্ষে ডাফেল ব্যাগটা হাতানো সহজ?’ প্রশ্ন করলেন টনিকে।

মাটিতে চোখ রাখল টনি।

‘মনে হয় জন,’ বিড়বিড় করে আওড়াল, ‘কাল রাতে ও টিরোনের পাশে ঘুমিয়েছে।’

টনির কাঁধে একটা হাত রাখলেন অফিসার।

‘আমি জনকে নিয়ে আসছি, আপনি ততক্ষণ আমার অফিসে ওয়েট করুন,’ বললেন, ‘ও কি এখনো ফায়ারওয়ার্ক দেখছে?’

‘মনে হয়,’ জানাল টনি।

‘টাকাটা আমাদের সেফে থাকবে,’ কথার খেই ধরলেন অফিসার ফলেট, ‘একটু পরই থানায় আপনার সাথে দেখা হচ্ছে।’

হতচকিত টনি ঘুরে দাঁড়িয়ে মেইন স্ট্রিটের দিকে হাঁটা দিল। কয়েক মুহূর্ত পরে মিশে গেল রাতের আঁধারে।

তিন গোয়েন্দার দিকে চাইলেন অফিসার ফলেট।

‘চলো, তোমাদের গার্জেনরা হয়তো চিন্তা করছেন।’

অফিসারকে অনুসরণ করে তাঁর ক্রুজারের ব্যাকসিটে উঠল তিন গোয়েন্দা। অফিসার মেইন স্ট্রিট ধরে গাড়ি চালালেন।

সুইমিংপুলের আকাশে তখনো রঙিন আলো ছড়াচ্ছে আতশবাজি। টেনিস কোর্ট আর বেসবল মাঠের মাঝখানে গাড়ি পার্ক করলেন অফিসার।

ছেলেরা তাঁকে বেসবল মাঠের ফেন্সের দিকে পা বাড়াতে দেখে, বড়দের খুঁজতে গেল।

‘কী রে, এতক্ষণ কোথায় ছিলি তোরা?’ প্রশ্ন করলেন মেরি চাচি। ‘আমি তো ভেবেছিলাম এলিয়েনরা তোদের কিডন্যাপ করেছে বুঝি।’

ঘড়ি দেখল কিশোর। ওরা প্রায় আধা ঘণ্টা গরহাজির ছিল।

অফিসার ফলেটকে দেখা যাবে, এ রকম একটি জায়গা বেছে নিয়ে বসল ওরা। অফিসার হেঁটে গেলেন জনের কাছে, দুজন দাঁড়িয়ে কথা বলল মিনিটখানেক। অফিসার এবার জনকে নিয়ে তাঁর ক্রুজারের উদ্দেশে এগোলেন। গাড়িটা মেইন স্ট্রিটে উঠে হারিয়ে গেল।

‘জন কাজটা করেছে বিশ্বাস হয় না,’ বলল রবিন।

ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ল মুসা।

‘টিরোনের এখন কী হবে তাই ভাবছি,’ বলল ও।

‘কী আর হবে, টনি আর রয় জনের জায়গায় অন্য লোক নেবে,’ বলল কিশোর।

‘রয় কোথায়?’ প্রশ্ন করল রবিন।

‘জনের সঙ্গে ছিল না?’ পাল্টা জিজ্ঞেস করল কিশোর।

‘না,’ জানাল মুসা, ‘শুধু জনকেই দেখলাম। রয় হয়তো হোটেলে ফিরে গেছে। ঝড়ের জন্য কাল রাতে নাকি ঘুমোতে পারেনি।’

কাল রাতের ঝড়ের কথা মনে পড়ল কিশোরের। শেডের মেঝেতে কাদাটে পদচিহ্নগুলোর কথাও মাথায় এল। আর কল্পনায় ভেসে উঠল সকালে, গাড়ির অ্যান্টেনা থেকে রয়ের ভেজা স্নিকার্স ঝোলার দৃশ্য।

‘আমার মনে হচ্ছে আমরা সবাই জনকে খামাখা দোষী ভাবছি,’ হঠাৎই বলে উঠল কিশোর, ‘আমার ধারণা টাকাটা রয় চুরি করে গার্ডেন শেডে লুকিয়ে রেখেছিল!’

‘কিন্তু ওর কাছে তো চাবি নেই,’ বলল মুসা।

‘আমার মনে হয় রয় জানত বৃষ্টি হলে জন বাইরে ঘুমোবে না। জন যখন বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ট্রাক ক্যাবে ঢুকেছে, সে সময় রয় ঢোকে টিরোনের ভেতর।’

‘কীভাবে? রয়ের কাছে তো চাবি নেই,’ আবারও বলল মুসা।

‘টনি যখন ঘুমোচ্ছিল তখন রয় ওর চাবিটা হাত করে,’ বলল কিশোর, ‘রয় ডাফেল ব্যাগটা চুরি করে শেডে লুকিয়ে রাখে, তারপর দৌড়ে হোটেলে ফিরে যায়। নিশ্চয়ই শেড থেকে ব্যাগটা নিয়ে টাকা হাতাত।’

হঠাৎই শ্বাস টানল রবিন।

‘রয় এখন হয়তো ওখানেই আছে!’ বলল ও, ‘আমরা যেভাবে সটকে পড়েছিলাম, সেই একই কায়দা করেছে ও!’

‘চলো!’ বলল কিশোর। মিস্টিক গ্রিনহাউসের পাশ কাটিয়ে, বুক নুকের পেছন দিয়ে, গোলাপবাগানের উদ্দেশে ছুটে চলল ওরা। দস্তুরমতো হাঁপাচ্ছে, শেডের থেকে গজ দশেক দূরে, গোলাপঝাড়ের পেছনে ঘাপটি মেরে বসল তিনজন। খোলা দরজা দিয়ে আলোর রেখা বেরিয়ে এসেছে।

‘ভেতরে কেউ আছে!’ হিসিয়ে উঠল মুসা।

ছেলেরা পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল। বারল্যাপ ব্যাগগুলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসা এক ছায়ামূর্তি। লোকটা উঠে দাঁড়াতেই বোঝা গেল ওটা রয়।

‘কী করা যায়?’ ফিসফিস করে বলল রবিন।

‘স্ক্রুড্রাইভারটা আছে,’ বলল মুসা, ‘ওটা দিয়ে ওকে আটকে দেব!’

‘না, চলো অফিসার ফলেটের কাছে যাই,’ বাধা দিয়ে বলল কিশোর।

মাথা নাড়ল মুসা।

‘অত সময় নেই! টাকাটা না পেলে রয় পগার পার হয়ে যাবে!’ গুড়ি মেরে শেডের দিকে এগোতে লাগল ও, ‘আউচ!’ চেঁচিয়ে উঠল।

‘কী হলো?’ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল রবিন।

‘কাঁটা!’

আচমকা রয় ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এল শেড থেকে। ফ্ল্যাশলাইটের আলো ফেলল মুসার ওপর। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুসার বাহু চেপে ধরল ও।

‘টাকাটা কী করেছ?’ কর্কশ কণ্ঠে জানতে চাইল।

‘ওকে ছেড়ে দিন!’ গর্জে উঠল রবিন। ও আর কিশোর দৌড়ে গেল মুসার পাশে।

‘হ্যাঁ, ওকে ছেড়ে দিন!’ ভরাট এক কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠল। শেডের আড়াল থেকে উদয় হয়েছেন অফিসার ফলেট। সঙ্গে জন।

চলবে...

আরও পড়ুন