‘ইভান ভাইয়া চলে গেছে।’ ছোট ভাই ফাহাদের কথায় বিছানা থেকে উঠে বসল রাহাত। দ্রুত গিয়ে দাঁড়াল বারান্দায়। দড়িতে মেলে দেওয়া কাপড়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখত পেল, একটা কার্টন হাতে হেঁটে যাচ্ছে ইভান। যত দূর ওকে দেখা গেল, তাকিয়ে রইল রাহাত, তারপর ফিরে এল ঘরে। বিছানায় বসতেই চোখ পড়ল পড়ার টেবিলের ওপর। এলোমেলো বইখাতার স্তূপ টেবিলে। এক পাশে দেখা যাচ্ছে শার্লক হোমস রচনাসমগ্র। জন্মদিনে ইভান বইটা উপহার দিয়েছিল ওকে। ইভান কি টের পেয়ে গেছে? বুদ্ধিমান ছেলে ও। টের না পাওয়াটাই অস্বাভাবিক। তা ছাড়া গতকাল থেকে এ ঘটনা নিয়ে কানাঘুষা হয়েছে অনেক। নানা রকম গল্প বানিয়েছে ছেলেপেলেরা। ক্লাসেই সবাই ছেঁকে ধরেছিল রাহাতকে। অধিকাংশ সময় ইভানের পাশে বসে সে। সবাই ধরেই নিয়েছে, পুরো ঘটনা জানে ও। জুনিয়র-সিনিয়ররাও মেসেজ দিচ্ছিল ক্রমাগত। ফেসবুক ডিঅ্যাকটিভ না করে উপায় ছিল না রাহাতের। ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিল পুরো সময়। কী উত্তর দিত সে? কোনো উত্তর তো নেই ওর কাছে। একটা কাজই করতে পারে সে, সত্যটা স্বীকার করা। কিন্তু কীভাবে সেটা করবে? সত্য বলার পরিণাম কী হবে, তা ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছে না রাহাত। ওকে চমকে দিয়ে হঠাৎ বেজে উঠল ফোনের রিংটোন। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নাম দেখেই শিউরে উঠল রাহাত। এই কল রিসিভ করতে চায় না সে। কিন্তু না করেও উপায় নেই। রিসিভ করতেই হলো।
—হ্যালো।
—রাহাত।
—ভাই।
—যা বলেছি মনে আছে তো?
—মনে আছে ভাই।
—কোনো ঝামেলা করবি না খবরদার।
—না ভাই। ঝামেলা করব না।
—ওকে। তোকে কেউ ফোনটোন দিছিল?
—দিয়েছিল কয়েকজন। ধরি নাই। ইভানও কল দিয়েছে আজকে অনেকবার। ধরি নাই। আর কাল তো ফোন বন্ধ ছিল।
—ওকে। আমি ফোন করে আপডেট নেব মাঝে মাঝে। ফোন যদি না ধরিস রে রাহাত, কী যে করব তোরে…
—ফোন ধরব ভাই।
—ওকে। আর আমি না বলা পর্যন্ত স্কুলে যাবি না খবরদার। রাখলাম।
—আচ্ছা ভাই।
ফোন রেখে এটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাহাত। মাথা কাজ করছে না ওর। কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে পায়চারি করল অস্থিরভাবে। একবার পড়তে বসল টেবিলে। উঠে পড়ল একটু পরই। কিছুই ভালো লাগছে না ওর। বারবার মনে হচ্ছে, ইভানের সঙ্গে বেইমানি করছে ও। চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ জম্বির মতো পড়ে রইল রাহাত। কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না ও। একটু পর সোজা হয়ে বসল আবার। চোখ চলে গেল টেবিলে রাখা শার্লক হোমস রচনাসমগ্র বইটাতে। বইটা ওলটাতেই চোখে পড়ল গোটা গোটা অক্ষর। ‘তুই সব সময় সত্যি বলিস। এটা খুব ভালো লাগে। এ রকমই থাকিস।’ জন্মদিনে ওকে উইশ করে লিখেছিল ইভান। ‘সত্যি বলতে পারলাম কই?’ ভাবল রাহাত। ইভানের সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুটা এখনো মনে আছে ওর। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ওরা তখন ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ে। পাশাপাশি বসে ছিল ওরা। গণিত স্যার ক্লাসে এসে বললেন, ‘কে কে হোমওয়ার্ক আনো নাই, উঠে দাঁড়াও।’ ব্যাগ চেক করে আঁতকে উঠল রাহাত। সব এনেছে সে, কেবল হোমওয়ার্কের খাতাটাই আনা হয়নি। শাস্তির ভয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে গিয়েছিল ওর মুখ। ব্যাগ থেকে হোমওয়ার্কের খাতা বের করে তৈরি ইভান। হঠাৎ ওর চোখ পড়ল রাহাতের দিকে। ‘হোমওয়ার্ক আনোনি?’ জিজ্ঞেস করল ইভান। মাথা নেড়ে জবাব দিল রাহাত, আনেনি। ইভান বলেছিল,
—সমস্যা নাই। স্যার কিছু বলবেন না।
—স্যার বলেছেন, হোমওয়ার্ক না আনলে ক্লাস থেকে বের করে দেবেন।
—স্যাররা ও রকম বলেনই। কিছু হবে না।
একটু সাহস পেল রাহাত। উঠে দাঁড়াল। কড়া চোখে স্যার এগিয়ে এলেন রাহাতের দিকে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
—হোমওয়ার্ক আনিস নাই?
—না স্যার।
—ক্লাস থেকে বের হ। ফাঁকিবাজ ছাত্র আমার দরকার নাই। বাইরে গিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক।
মাথা নিচু করে বেঞ্চ থেকে বের হলো রাহাত। ছেলেরা কেউ মুখ টিপে হাসছে। কারও চোখে সমবেদনা। আশ্চর্যের ব্যাপার, বাকি সবাই হোমওয়ার্ক এনেছে আজ। কীভাবে সম্ভব এটা? ভেবেই পেল না রাহাত। বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল কান ধরে। আশপাশের ক্লাসরুম থেকে ছেলেমেয়েরা দেখছে ওকে। লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে এল ওর। এমন সময় রাহাত দেখল, হাসিমুখে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসছে ইভান। আশ্চর্য ব্যাপার, এই ছেলে বাইরে কেন! ইভান এসে দাঁড়াল ঠিক রাহাতের পাশে। তারপর সে-ও দাঁড়াল কান ধরে। চাপা গলায় রাহাত জিজ্ঞেস করল,
—তোমাকে বের করল কেন? তুমি তো হোমওয়ার্ক এনেছ।
—এনেছিলাম, এখন আর আনি নাই।
—মানে?
—ভাবলাম, তুমি একা দাঁড়িয়ে থাকবা, আমিও দাঁড়াই।
কথাটা বলে বড়জোর দুই সেকেন্ড খুব গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল ওরা, তারপরই হেসে ফেলল খেঁক খেঁক করে। ইভান বলল, ‘মাথা নিচু করে দাঁড়ানোর কিছু নাই। কানে ধরে দাঁড়ানো খারাপ কিছু না। সোজা হও।’ বুক টান করে দাঁড়াল দুজনই। তারপর আবারও খেঁক খেঁক করে হাসি…
রাহাতের মনে হলো, হাসিটা আশপাশেই কোথাও শুনতে পেল যেন। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল সে। এপাশ-ওপাশ করল কিছুক্ষণ। একমুহূর্ত পর উঠে বসল ঝট করে। হ্যাঙ্গার থেকে নামাল স্কুলের ইউনিফর্ম। মনস্থির করে ফেলেছে ও। স্কুলে যাবে। কথা বলবে স্যারের সঙ্গে। ঝামেলা যা হওয়ার হবে।
*
টিফিনের পর ব্যাগ নিয়ে ক্লাসে এলে খুব একটা অবাক হয় না কেউ। কাছাকাছি যাদের বাসা, তাদের অনেকেই ব্যাগ নিয়ে টিফিন খেতে যায় বাসায়। কিন্তু রাহাতের মনে হলো, ওর দিকে অন্যভাবে তাকাচ্ছে সবাই। ‘কিরে মামা, তুই এখন এলি কী মনে করে?’ বা ‘কেন দেরি হলো?’ এমন কথা জিজ্ঞেস করল না কেউ। সোজা হেঁটে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে ব্যাগ রাখল রাহাত। সামনে বসা কেউ কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল ওর দিকে। নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করল কেউ কেউ। কোনো কিছুতেই পাত্তা দিল না ও। কিছুক্ষণ পরই ওর মনে হলো, বসে থেকে লাভ নেই। যা করার দ্রুত করে ফেলতে হবে। বেঞ্চ থেকে বের হলো রাহাত। দ্রুত বেরিয়ে এল ক্লাস থেকে। জানে, কোথায় গেলে পাওয়া যাবে জমিরউদ্দিন স্যারকে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে সোজা একতলায় চলে এল রাহাত। টিচার্স রুমের পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল, চা খাচ্ছেন স্যার।
—স্যার, আসব?
—আয়।
—স্যার, একটু কথা ছিল।
—বল, কী কথা।
—স্যার, একটু যদি বাইরে আসতেন, স্যার...
—আচ্ছা, দাঁড়া।
চেয়ার ঠেলে দরজার দিকে এগিয়ে এলেন জমিরউদ্দিন স্যার। নার্ভাস হয়ে গেছে রাহাত। তারপরও কী বলবে মনে মনে ঠিক করে নিল একবার। স্যার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
—কী সমস্যা?
—স্যার, ইভানের ব্যাগে ছুরি কে রেখেছে, আমি জানি স্যার।
—বলিস কী! এতক্ষণে বলছিস এই কথা! এত কিছু হয়ে যাওয়ার পর?
—স্যার, আমি ভয় পেয়েছিলাম।
—কে রেখেছে? নাম বল। পিটিয়ে ওর পিঠের ছাল তুলে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখব। বেয়াদবের দল!
—জিকো ভাই।
—কোন জিকো?
—কলেজের।
—ওর সাথে ইভানের কী? ও কেন ইভানের ব্যাগে ছুরি রাখবে? কী বলিস আবোলতাবোল?
—জি না স্যার। সত্যি। সেদিন সবার শেষে আমি এসেছিলাম। ব্যাগ রেখে পেছনের দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুতার ফিতে খুলে গিয়েছিল। তখন নিচু হয়ে আমি ফিতে বাঁধছিলাম।
—তারপর?
—তখনই দেখি জিকো ভাইসহ আরও দুজন ক্লাসে ঢুকলেন। জিকো ভাইয়ের ব্যাগে ছুরিটা ছিল। উনি সেটা বের করে ইভানের ব্যাগে ঢোকালেন। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় ওনাদের চোখে পড়ে যাই আমি। আমার কলার ধরে জিকো ভাই হুমকি দিয়ে গেছেন।
—বলিস কী!
—জি স্যার। তখন পিটি স্যার বাঁশি বাজিয়ে ওপরে উঠছিলেন, তাই ওনারা আর আমাকে কিছু বলেননি। কিন্তু ফোনে বারবার হুমকি দিয়েছেন।
—বুঝতে পেরেছি। জিকোর সঙ্গে ইভানের ঝামেলাটা কী?
—স্যার, সায়েন্স ফেস্ট নামানো নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল কিছুদিন আগে। জিকো ভাই বাজেট থেকে টাকা সরিয়েছেন। এটা আমরা জেনেছি। ইভান এ নিয়ে জিকো ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক করেছিল। ভাই বলেছিলেন, ফেস্ট শেষ হলে ইভানকে দেখে নেবেন। তারপর আর কিছু হয়নি। আমরাও ব্যাপারটা ভুলে গেছি।
—বুঝেছি। এখন সব পরিষ্কার আমার কাছে। শুরু থেকেই আমার বিশ্বাস ছিল, ইভান এ রকম কাজ করতেই পারে না। যাক, মানুষ চিনতে আমি ভুল করিনি।
—স্যার, উনি বারবার ফোন করে আমাকে হুমকিধমকি দেন। মুখ খুললেই নাকি আমার বারোটা বাজিয়ে ফেলবেন। এ জন্য ভয়ে আমি চুপ করে ছিলাম। বলতে পারিনি।
—খুব ভালো করেছিস বলে। ইভানকে তো টিসি দিয়ে দেওয়ার কথা হচ্ছে। শোন বাবা, আমরাও তো পড়াশোনা করেছি। কলেজ-ভার্সিটিতে আমরাও পড়েছি। এই সব ছেলেপেলে কত দূর যেতে পারে আমি দেখে নেব। তুই তোর মতো ক্লাস কর, যা।
—আচ্ছা স্যার।
রাহাত ঘুরে চলে যাচ্ছিল, স্যার ‘অ্যাই শোন তো’ বলে ডাকায় আবার ফিরে এল। স্যার ওর পিঠ চাপড়ে বললেন,
‘তুই যে কাজটা করলি, তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। প্রাউড অব ইউ! সব সময় এমন অনেস্ট থাকবি। ঠিক আছে?’
—জি স্যার। দোয়া করবেন।
—যা, ক্লাসে যা।
রাহাতের মনে হলো, ওর বুক থেকে কয়েক টন ওজনের পাথর নেমে গেছে। টানা চলতে থাকা পরীক্ষা শেষ হলে যেমন নির্ভার লাগে, ঠিক সে রকম লাগছে ওর। দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে ক্লাসে ঢুকল ও। ক্লাসের ছেলেরা অবাক হয়ে তাকাল ওর দিকে। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করল না কেউ। আগের মতোই ফিসফিস করে কথা বলল নিজেরা নিজেরা। এবারও পাত্তা দিল না রাহাত। ব্যাগ থেকে বের করল খাতা-কলম। ছবি আঁকতে ইচ্ছা করছে ওর।
*
জমিরউদ্দিন স্যারের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছেন হেডস্যার। ভারী পেপারওয়েট টেবিলে ঘোরাতে ঘোরাতে মাঝে মাঝে জমির স্যারের দিকে তাকাচ্ছেন তিনি। স্যারের কথা শেষ হওয়ামাত্র পেপারওয়েট ঘোরানো থামালেন হেডস্যার। কী যেন ভাবলেন কিছুক্ষণ। হেডস্যারের কক্ষটা হুট করে এত নীরব হয়ে গেল, অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করলেন জমিরউদ্দিন স্যার। হেডস্যারের দিকে একবার তাকিয়ে তিনি বললেন,
—স্যার...
—উঁ?
—কিছু বলছেন না যে?
—না, চিন্তা করে দেখলাম, আজকালকার ছেলেপেলে কত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। আমরা কি তাহলে ঠিকঠাক শেখাতে পারছি না ওদের? এ রকম কেন হবে?
—সবাই তো আর এ রকম নয় স্যার। এখানে জিকোর মতো ছেলে যেমন আছে, আবার রাহাতের মতো অনেস্ট ছেলেও তো আছে স্যার।
—তা আছে। ঠিক আছে, আপনি ক্লাসে যান। ক্লাসের সময় তো হয়ে গেছে। আমি দেখছি কী করা যায়।
—জি স্যার। আসি তাহলে।
চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন তিনি। টেবিল থেকে আবার হাতে তুলে নিলেন পেপারওয়েটটা। চিন্তার ঝড় চলছে তাঁর মাথায়।
*
ছুটির ঘণ্টা বাজতেই হইচই করে ক্লাস থেকে বের হতে শুরু করে ছাত্ররা। ক্লাসেই বসে রইল রাহাত। ভিড় একটু কমলে বের হবে। আসলে বাকিদের এড়াতে চাইছে সে। একে একে সবাই নেমে যাওয়ার পর বের হলো রাহাত। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে দাঁড়াল ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডের সামনে। মাঠে ব্যাগ রেখে স্ট্যাম্প গেড়ে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে একদল ছেলে। গোল হয়ে আড্ডা মারছে কেউ কেউ। অন্য সময় হলে রাহাতও হয়তো খেলত, কিন্তু আজ মুড নেই ওর। মাঠের পাশে পিচঢালা পথ ধরে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করল রাহাত। মাঠ যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে গাছপালাঘেরা আবাসিক এলাকা। দুই পাশের বিল্ডিংগুলোর মাঝখানে হাঁটার পথ। সোজা চলে গেলেই ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার ফটক। পুরোনো লাল বিল্ডিংয়ের সামনে আসতেই সিঁড়ি থেকে রাহাতকে ডাকল কে যেন। ঘুরে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না রাহাত। সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে রইল ও।
‘রাহাত, দাঁড়া। তোর সঙ্গে কথা আছে।’ ভেতর থেকে বলে উঠল একটি কণ্ঠ। চিনতে আর দেরি হলো না রাহাতের, জিকো দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। ঠিকই খবর চলে গেছে ব্যাটার কানে।
‘আমার কাজ আছে। বাসায় যেতে হবে।’ বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলল রাহাত।
রাহাতকে চমকে দিয়ে বিকট আওয়াজ করে দুটি বাইক বেরিয়ে এল বিল্ডিংয়ের গ্যারেজ থেকে। একটা বাইক খুব ভালো করে চেনে ও—ইয়ামাহার এফজেডএস ভার্সন টু। স্কুলের মোটামুটি সবাই চেনে এই বাইক। বাপ্পী ভাই চালান এই বাইক। এলাকার সবাই ভয় পান তাঁকে। কিন্তু তাঁর বাইকে বসে আছেন জিকো ভাই। হেলমেটটা রেখেছেন ভিউ মিররের ওপর। পেছনে জিকো ভাইয়ের বন্ধু তপু। আরেকটা বাইকে বসা দুজনের কাউকেই চিনতে পারল না রাহাত। দুজনই হেলমেট পরা। ওর ঠিক সামনে এসে ব্রেক কষল বাইক দুটি। বাইকের মিররে তাকিয়ে মাথার চুলগুলো ঠিক করে নিলেন জিকো ভাই। তারপর ঘাড় নেড়ে ইশারায় বাইকে উঠতে বললেন রাহাতকে। রাহাত এমন ভাব করল, যেন কিছুই বুঝতে পারে না।
—কী ভাই?
—বাইকে ওঠ।
—কেন?
—আরে চল। তোকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।
—আমি একাই যেতে পারব।
—তাই? খুব সাহস হয়েছে? একা একা অনেক কিছু করছিস আজকাল। বাইকে ওঠ, নইলে একটা থাপ্পড় দেব, ঘুরে নিচে পড়ে যাবি।
জিকোর পেছনে বসা তপু আরও সরে বসল পেছনের দিকে। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। জিকো আর তপুর মাঝখানে বসতে হবে রাহাতকে। কাঁধ থেকে ব্যাগটা হাতে নিয়ে দুজনের মাঝখানে বসে পড়ল রাহাত। বসামাত্র পেছন থেকে ওর ওপর চাপ দিল তপু। এমনভাবে ওকে চেপে ধরেছে তপু, চাইলেও নড়াচড়া করতে পারবে না রাহাত। বিকট শব্দ করে স্টার্ট নিল বাইক। খটাখট গিয়ার বদলাল জিকো। তীব্র গতিতে ছুটে চলল বাইক। অন্য বাইকটা আসছে পেছন-পেেছন। জিকোরা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা বুঝতে পারল না রাহাত। তবে এটুকু বুঝতে পারল, ভালো বিপদে পড়তে যাচ্ছে সে।
চলবে...
আদনান মুকিতের লেখা 'দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি' ২০২৩ সালের জানুয়ারি সংখ্যা থেকে কিশোর আলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথমা প্রকাশনী থেকে কিশোর উপন্যাসটি পরিমার্জিত হয়ে বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি কিনতে পাওয়া যাবে এই লিংক থেকে: 'দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি' । লিংকে ক্লিক করে বইটি অর্ডার করতে পারো অথবা ফোন করো এই নম্বরে: 01730000619।