অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাকঘুম ভাঙতেই ধড়মড় করে বিছানা থেকে উঠে পড়ল ইভান। ফোনটা পাশ থেকে হাতে নিয়ে তাকাল স্ক্রিনে, ছয়টা বাজছে ঘড়িতে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও। আজকে ছুটি, স্কুল নেই। আর আজকেই ঘুম ভেঙে গেল সকাল সকাল। মাকে নিয়ে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল ইভান। কিন্তু কী দেখছিল, তা কিছুতেই মনে করতে পারল না আর। ঘুম ভাঙার পর সুন্দর স্বপ্নগুলো মনে থাকে না। কিন্তু দুঃস্বপ্নগুলো তাড়া করে অনেকদিন পর্যন্ত, ব্যাপারটা আগেও খেয়াল করছে ও। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যেদিন স্কুল থাকে না, কেন যেন তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায় সেদিন। ইভান ভেবেছিল, একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে আজ। বন্ধ রেখেছিল ফোনের অ্যালার্মটাও। লাভ হলো না। ঠিক ছয়টায় ঘুমটা ভেঙে গেল। আবার শুয়ে পড়ল ইভান। হালকা ঠান্ডা লাগছে, পায়ের কাছে পড়ে থাকা কাঁথাটা টেনে দিল গলাপর্যন্ত। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করল আবার। কয়েক মিনিট পরই ওর মনে হলো, ঘুম আসবে না। পাশ ফিরে হাতে তুলে নিল ফোন। ফেসবুকে ঢুকে স্ক্রল করল কিছুক্ষণ। ভোরবেলা হোমপেজটা কেমন যেন ফাঁকা লাগে ওর কাছে। যে পোস্টগুলো আসে, সবই কয়েক ঘণ্টা আগের। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জমজমাট হতে থাকে ওর হোমপেজ। তারপরও অযথাই কয়েকবার রিফ্রেশ করল ইভান। কয়েকটা রিল কয়েক সেকেন্ড দেখেও পুরোটা দেখল না। কী খুঁজছে নিজেও জানে না ও। স্ক্রিন লক করে ফোনটা পাশে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করল আবার। কয়েক মিনিট পর আবার হাতে নিল ফোন। বিড়াল কথা বলতে পারে কি না, সার্চ করল গুগলে। কয়েকটা রেজাল্ট ঘেঁটে ফোন রেখে দিল আবার। ‘আরে, কী সার্চ করছি আমি!’ মনে মনে হাসল ইভান। আরও কত মানুষ এটা সার্চ করেছে! আশ্চর্য! ‘আচ্ছা, কাকাতুয়া আর ককাটেল কি একই পাখি? না আলাদা?’ ভাবল ইভান। আবার ফোন হাতে নিয়ে সার্চ করল ও। ‘ধুর, এটা জেনে আমার কী!’ কিছুক্ষণ কয়েকটা আর্টিকেল পড়ার পর ভাবল ইভান। হঠাৎ কাকাতুয়া আর ককাটেলের কথা কেন মনে হলো, মাথায় ঢুকল না ওর। বাইরে কিছু পাখি ডাকছে। নিচে গিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে আসবে কি না, ভাবল ইভান। কিন্তু পুরোপুরি আশ্বস্ত করতে পারল না নিজেকে। শুয়েই রইল চুপচাপ। ‘রুশার আসলে মাথা খারাপ,’ ভাবল ইভান। ‘বিড়াল আবার কথা বলে নাকি? প্রথম দিন থেকেই ওর কথাবার্তায় ঘাপলা লাগছিল আমার। ওর সঙ্গে বেশি মেশা যাবে না,’ ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল ইভান।
‘দেশটা শেষ করে দিল! এই দেশের আর কিছু হবে না’ ফুফার গলার আওয়াজে দ্বিতীয় দফায় ঘুম ভাঙল ইভানের। ফোন হাতে তুলে নিল ও, নয়টা বেজে গেছে। বেশ ভালোই ঘুম হয়েছে তাহলে।
‘সব কয়টা চোর। অ্যান্টার্কটিকায় যেমন পেঙ্গুইন ভর্তি, আমাদের দেশ ভর্তি চোরে,’ শ্লেষমাখা কণ্ঠে বললেন ফুফা। ডাইনিং টেবিলে বসে পত্রিকা পড়ছেন তিনি। ফেসবুকে একেকটা নিউজের লিংকে মানুষ যেমন কমেন্ট করে, তার জীবন্ত ভার্সন হচ্ছেন ফুফা। পার্থক্য একটাই, তাঁর কমেন্ট ইভান আর ফুফু ছাড়া আর কেউ টের পায় না। ঝিম মেরে বিছানায় পড়ে রইল ইভান। উঠে গিয়ে ফুফার মুখোমুখি হতে চায় না। সকালে পত্রিকা পড়তে পড়তে চা খান ফুফা। পত্রিকা পড়া শেষ হলে উঠে যান ডাইনিং টেবিল থেকে। সেই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করছে ইভান। কিন্তু আজকে মনে হয় পুরো পত্রিকা মুখস্থ করার মিশন নিয়ে নেমেছেন ফুফা।
‘শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে দিতে হয় চাঁদা। যাচ্ছেতাই অবস্থা।’ ফুফার কণ্ঠে রাগ, ‘কেন, চাঁদা দিতে হবে কেন? দেশে কি আইনকানুন নাই? এ জন্যই তো জিনিসপত্রের দাম এত বেশি। চাঁদা দিতে হলে ব্যবসায়ীরা যাবেন কোথায়? দাম তো বাড়াবেই।’
ফুফা এখন প্রথম পাতা পড়া শেষ করে ভেতরের পাতা পড়ছেন। আন্দাজ করল ইভান।
‘অসময়ে বৃষ্টি, শর্ষের ফলন কম হওয়া নিয়ে শঙ্কা। বলে কী? বৃষ্টি হলো কখন? আর একটু বৃষ্টিতেই ফলন কমে যাবে? কী আশ্চর্য! নাহ, দাম বেড়ে যেতে পারে,’ ফুফা বললেন।
‘তোমার চিন্তা কিসের?’ রান্নাঘর থেকে বললেন ফুফু। ‘তুমি কি শর্ষের দোকানদার?’
‘ফালতু কথা বোলো না তো। একটা জিনিসের দাম বাড়লে অন্যগুলোর ওপরও প্রভাব পড়ে। অর্থনীতিবিদেরা তো সে রকমই বলেন। আগে থেকে শর্ষের তেল কিনে রাখা দরকার।’
‘দুটো ড্রাম তো খালি পড়ে আছে।’
‘ড্রাম খালি পড়ে আছে মানে? ড্রাম দিয়ে কী হবে?’
‘শর্ষের তেল কিনে রাখবে কোথায়? ড্রাম লাগবে না? তাই বললাম, ড্রাম দুটো খালি আছে।’
‘তোমার সঙ্গে কথা বলাই ভুল হয়েছে,’ গজগজ করতে লাগলেন ফুফা। পত্রিকা ভাঁজ করে সশব্দে রাখলেন টেবিলের ওপর। খট করে টেবিলে গ্লাস রেখে জগ থেকে পানি ঢাললেন। টের পেল ইভান। একটু পানি খেয়ে ফুফা বললেন, ‘ওদিকে একজন এখনো ঘুমাচ্ছেন। প্রিন্স চার্লস টু!’
‘ঘুমাক না,’ ফুফু বললেন। ‘আজ তো ছুটি।’
‘ছাত্রজীবনে ছুটি বলে কিছু নেই। আজকালকার ছেলেপেলেগুলো কী হচ্ছে বুঝি না। রাত জেগে মুঠোফোন টেপে। আর সারা দিন পড়ে পড়ে ঘুমায়। কোনো ডিসিপ্লিন নাই। আমাদের সময়ে আমরা ভোরে উঠতাম। উঠে পড়তে বসতাম। এই ছেলেকে তো পড়তেই দেখি না।’
‘ওর পড়া ও ঠিকমতোই পড়ছে।’
‘কোথায় পড়ছে? সারা দিন পড়ে থাকে কুকুর-বিড়াল নিয়ে। আরে ব্যাটা, তুই একটা ভদ্রলোকের ছেলে। কুকুর-বিড়াল নিয়ে নাড়াচাড়া কেন? আমার ছেলে হলে মেরে সোজা করে ফেলতাম।’
‘মেরেই তো ফেলেছ।’
‘আমি বাজারে গেলাম।’
ধরাম করে দরজা লাগানোর শব্দে ইভান বুঝল, চলে গেছেন ফুফা। ধীরে ধীরে বিছানা ছাড়ল ও। হাতমুখ ধুয়ে চলে এল ডাইনিং রুমে। চেয়ারে বসে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছেন ফুফু। সামনে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। চা খাওয়ার কথা ভুলেই গেছেন তিনি। বারান্দা থেকে আসা আলো এসে পড়ছে তাঁর গালে। চকচক করছে চোখ থেকে পড়া পানির বিন্দু। ফুফুর পাশে গিয়ে বসল ইভান। তাঁর সামনে থেকে কাপটা তুলে চায়ে চুমুক দিল শব্দ করে।
‘কিরে, তুই আমার চা খাচ্ছিস কেন চোরের মতো?’
‘তুমি তো খাচ্ছ না। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল, ভাবলাম খেয়ে ফেলি।’
‘খালি পেটে চা খাবি না, খবরদার।’ দ্রুত সামলে নিলেন ফুফু। ‘নাশতা দিচ্ছি।’
‘ব্যাপক খিদে পেয়েছে, ফুফু।’
‘দাঁড়া।’
‘আমিও আসি। হেল্প করি তোমাকে।’
‘তোর মতলবটা কী? টাকা লাগবে?’
‘আরে না। আজকে খাই তোমার সঙ্গে।’
‘এত আহ্লাদ করতে হবে না। রান্নাঘরে গিয়ে আমার কৌটা-বাটি ভেঙে ফেলবি, তোকে আমি চিনি না?’
ইভানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রান্নাঘরে চলে গেলেন ফুফু। পত্রিকাটা নিয়েই খেলার পাতায় চলে গেল ইভান। নাশতা নিয়ে এলেন ফুফু। খেতে শুরু করল দুজন।
‘ইভান।’
‘বলো।’
‘পড়াশোনা ঠিকমতো করিস, বাবা। সামনে তোর এসএসসি। এখন একটু মন দে।’
‘দিচ্ছি তো।’
‘বাইরে ঘোরাঘুরি কমা।’
‘কমিয়েছি তো।’
‘কুকুর-বিড়াল নিয়ে লাফালাফি করিস না, বাবা। কখন কামড়ে দেবে, তখন পড়ব আরেক ঝামেলায়।’
‘কুকুর শুধু শুধু কাউকে কামড়ায় না।’
‘বলেছে তোকে।’
‘তুমি চলো একদিন, তোমাকে ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।’
‘এক চড় খাবি। তাড়াতাড়ি খেয়ে পড়তে বস গিয়ে।’
খাওয়া শেষ করে উঠল ইভান। এখন বই নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতে হবে ওকে। স্কুলের পড়াগুলো পড়তে একেবারেই ভালো লাগে না ওর। এক প্যারা পড়তে গিয়ে কয়েকবার হাতে নেয় ফোন। পরক্ষণেই বোঝায় নিজেকে, নাহ, একটু পড়ি। তারপর আবার ফোন। ‘টুং’ করে নোটিফিকেশন এলেই মনে হয়, ‘দেখি একটু।’ তারপর টের পায়, অর্থহীন একটা মেসেজ দেখার নাম করে রিল দেখতে দেখতে চলে গেছে বেশ খানিকটা সময়। নিজেকে বুঝিয়ে আবার যখন পাঠ্যবইয়ে ফিরে এল ইভান, তখনই আবার ‘টুং’--নোটিফিকেশন। ধরবে না ভেবেও নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না আর। হাতে নিল ফোনটা। মেসেজ দিয়েছে রাহাত।
‘কই তুই?’
‘বাসায়’
‘ফিফা?’
‘কখন?’
‘এখনই আয়’
‘ফুফু বকবে।’
‘গুড বয়।’
‘দাঁড়া, আসছি।’
*
রাহাতের বাসায় গিয়েই ফিফা খেলতে বসে গেল ইভান। বাটিতে করে চানাচুর আর পেয়ারা খেতে দিলেন রাহাতের আম্মু। ভ্রু নাচিয়ে রাহাত বলল,
‘তাড়াতাড়ি পেয়ারা আর চানাচুর খেয়ে নে, ইভান।’
‘কেন?’
‘একটু পর তো গোল খাবি। পেট ভরে যাবে।’
‘লেম জোক অ্যালার্ট। আচ্ছা, জিকোর খবর কী রে?’
‘হাসপাতালে আছে শুনেছি…পাস দে…আর গাধা! কারে পাস দিলি তুই…গোড়ালির হাড্ডিতে ভালো নাড়া খেয়েছে ব্যাটা। আন্তর্জাতিকমানের একটা ফ্র্যাকচার হয়েছে শুনেছি।’
‘আয়হায়।’
‘ওমা, তোমাকে বললাম না, বিড়ালটা অদ্ভুত। আসো, আসো। আমি ওকে নিয়ে বের হচ্ছি। তুমি তিন নম্বর মাঠের কাছে এসে কল দিয়ো।’
‘ওরে বাবা, তুই এত দরদ দেখাচ্ছিস যে…আরে…গোল! গোল…তোর আবার কী হলো? উচিত শিক্ষা হয়েছে জিকোর। বাইক নিয়ে খুব ভাব দেখাত।’
‘আমার খারাপ লাগছে। ডগেশ তাড়া না করলে ও পড়ত না। কত দিন লাগবে সুস্থ হতে?’
‘দুই–তিন মাস নড়তে পারবে না মনে হয়। আমার এক খালুর এ রকম গোড়ালির হাড্ডিতে ফ্র্যাকচার হয়েছিল।’
‘তারপর?’
‘খালু মারা গেছে।’
‘মানে? বলিস কী! এই ফ্র্যাকচারে মারা গেল?’
‘আরে না। মারা গেছে অনেক পরে। বললাম আরকি।’
‘ধুর ব্যাটা। আমাদের কি ওকে দেখতে যাওয়া উচিত?’
‘প্রশ্নই আসে না। ওর মতো বেয়াদবের এক পা ভাঙা ঠিক হয়নি, দুই পা ভাঙা উচিত ছিল। অনেক লাফালাফি করেছে।’
‘দেখ, ছেলেটা চরম বদ, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা তো ওর মতো নই। আমি চেয়েছিলাম ওকে একটু ভয় দেখাতে। কিন্তু আমি কখনোই চাই না ওর পা ভেঙে যাক। এখন যেহেতু ব্যাপারটা ঘটে গেছে, আমি চাই একবার গিয়ে দেখা করে আসতে।’
‘তুই যা। আমি এর মধ্যে নেই।’
‘চল না, মামা।’
‘আচ্ছা, যাব বিকেলে। এখন খেল। তুই তো সব ম্যাচ হারবি মনে হচ্ছে।’
‘আরে না, কী বলিস। এই দেখ, এখনই জিতব।’
কিন্তু সত্যি হলো রাহাতের কথাই। কোনো ম্যাচেই সুবিধা করতে পারল না ইভান। অবাক হলো রাহাতও। ‘কী রে, আজ দেখি দাঁড়াতেই পারছিস না।’
‘তা–ই তো দেখছি। পজ কর তো, ফোন এসেছে।’
পকেট থেকে ফোন বের করল রাহাত। রুশার কল। একবার ভাবল ধরবে না। শেষমেশ ধরল।
‘হ্যালো।’
‘ইভান, তুমি আসবে না?’
‘কেন?’
‘ওমা, তোমাকে বললাম না, বিড়ালটা অদ্ভুত। আসো, আসো। আমি ওকে নিয়ে বের হচ্ছি। তুমি তিন নম্বর মাঠের কাছে এসে কল দিয়ো।’
কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিল রুশা। ইভানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চানাচুর মুখে দিল রাহাত।
‘কী রে, মামা!’
‘কী?’
‘কিছু না, চানাচুর।’
‘আরে ধুর। কী এক পাগলের পাল্লায় যে পড়েছি। তুই থাক, আমি দেখে আসি ব্যাপারটা কী। এসে একসঙ্গে যাব হাসপাতালে।’
‘হুঁ, হুঁ।’
‘আরে কী অদ্ভুত! হুঁ হুঁ করছিস কেন তুই?’
‘আমি তো প্রায়ই হুঁ হুঁ করি। আমার প্রিয় ব্যান্ড দ্য হু…’
রাহাতকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল ইভান। হেঁটে তিন নম্বর মাঠের কাছে চলে এল। মাঠের এক পাশে হাঁটার পথ। একটু পরপর আছে বসার জন্য বেঞ্চ। গাছের নিচে একটা বেঞ্চে বসে আছে রুশা। ইভানকে দেখেই হাত নাড়ল ও। কোলে শান্তভাবে বসে আছে বিড়ালটা। ইভান এসে দাঁড়াল ওর সামনে। রুশা বলল,
‘ভালো ক্যাটফুড কোথায় পাওয়া যায়, জানো? ও আমাদের খালার রান্না খেতে পারছে না। আমি একটা ব্র্যান্ডের ক্যাটফুড আনিয়েছি। কিন্তু সেটাও ওর পছন্দ হচ্ছে না।’
‘বিড়াল বলল এই কথা?’
‘হ্যাঁ, নইলে আমি জানলাম কীভাবে?’
‘কই দেখি, বিড়াল কী বলে…এই বিড়াল, বল তোর কী অবস্থা।’
পাত্তাই দিল না বিড়ালটা। অন্যদিকে তাকিয়ে রইল উদাস হয়ে।
‘কী রে, কথা বল। তো কি মনে হয়, সামনে আমরা বিশ্বকাপ জিতব?’
‘আরে, তুমি উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করছ কেন! খারাপ ব্যবহার করছ ওর সঙ্গে।’ রেগে গেল রুশা।
‘আমি খারাপ ব্যবহার করছি? দেখো, আমি জানি বিড়ালদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। অনেক দিন ধরে আমি ওদের নিয়ে কাজ করছি।’
‘তো? ঠোঁট উল্টে বলল রুশা। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ইভানের।
‘তোমাকে বিড়ালটা দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে।’
‘মোটেই না। ও আমাকে খুবই পছন্দ করেছে। ও বলেছে, আগে ওকে তুমি লুকিয়ে রাখতে। আমার বাসায় ও মনের আনন্দে ঘুরতে পারে। আলো০বাতাস পায়।’
‘সত্যিই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, নাকি ফাজলামো করছ, বুঝতে পারছি না। তোমার কথা বিশ্বাস করি না আমি। সেই প্রথম দিন থেকে ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছ। এখন বলছ, বিড়াল কথা বলে। হাস্যকর।’
‘কী বললে তুমি?’
‘যা বলার বলেছি। থাকো তুমি। বিড়ালের যদি যত্ন নিতে না পারো, জানাবে। আমি অন্য কাউকে দিয়ে দেব। বাই, সময়টাই নষ্ট হলো আমার।’
‘এ জন্যই।’
‘মানে?’
‘এ জন্যই রোজ সকালে তোমার ফুফা তোমাকে বকাঝকা করে। খুবই রুড তুমি।’ বলেই ঝট করে ঘুরে চলে গেল রুশা। তাজ্জব হয়ে গেল ইভান। রুড হওয়ার মতো কী বলল, সে বুঝতে পারছে না। কী অদ্ভুত এই মেয়ে। ‘পুরা গন কেস’। ভাবল ইভান। মাঠের গেট দিয়ে বের হতে গিয়েই চমকে উঠল হঠাৎ। ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও, রোজ সকালে ফুফা আমাকে বকাঝকা করে, এটা রুশা জানল কী করে? কে বলল ওকে? বিড়ালটা? তা কী করে সম্ভব?’
চলবে...