দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

সাধারণত সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামে ইভান। এখন অবশ্য লাফাচ্ছে না, জগিংয়ের মতো আস্তে আস্তে পেরোচ্ছে ধাপগুলো। মাথার ভেতর চিন্তার ঝড় চলছে ওর। হঠাৎ কেন থানায় ডেকে পাঠালেন রুশার বাবা? বিল্ডিংয়ের বাইরে এসে দাঁড়াল ইভান। ওর মনে হলো, রুশাকে ব্যাপারটা জানানো উচিত। নইলে পরে রেগে যাবে ও। বলবে, ‘উফ্, তুমি আমাকে জানাবা না?’ কিন্তু জানালে যদি আবার উল্টাটা হয়? রুশা যদি ওর বাবাকে ফোন করে বলে, ‘বাবা, তুমি ইভানকে কেন ডেকেছ?’ কিংবা যদি নিজেই চলে আসে থানায়? তখন নিশ্চয়ই ব্যাপারটা ভালোভাবে নেবেন না ওর বাবা। কী করা উচিত, বুঝতে পারল না ইভান। রাহাত বা রাতুলকে কি জানিয়ে যাওয়া উচিত? নাহ, ওদের জানালে ওরা আবার অযথা চিন্তা করবে। তা ছাড়া বললে রাতুলকে তো থামানোই যাবে না কোনোভাবে। দলবল নিয়ে থানায় উপস্থিত হবে ছেলেটা।

ভাবতে ভাবতেই গলির মাথায় চলে এল ইভান। রিকশা ডাকল একটা। রিকশায় উঠে ভাবনায় ডুবে গেল আবার। ‘আচ্ছা, রুশা বাসায় গিয়েছে তো ঠিকমতো? আমি তো কাছকাছি এসে রিকশা থেকে নেমে গিয়েছিলাম। তারপর বাসায় এসেই সোজা চলে গিয়েছি গোসলে। রুশার কোনো ফোন বা মেসেজ তো আসেনি।’ চিন্তা বাড়ল ইভানের। পকেট থেকে ফোন বের করে কল করল রুশাকে। রিং হলো, কিন্তু রিসিভ করল না রুশা। মেসেঞ্জারেও সবুজ বাতি জ্বলছে না রুশার নামের পাশে। ‘তোমার বাবা কল দিয়ে আমাকে থানায় যেতে বলেছেন। আমি যাাচ্ছি এখন।’ মেসেজ লিখে সেন্ড করে দিল ইভান। সেন্ট হওয়ার পরই ওর মনে হলো, ঘটনা না জেনে আগেই ওকে জানানোর দরকার নেই। আনসেন্ড করে দিল মেসেজটা। শুধু লিখল, ‘তুমি কোথায়?’

ফোনটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে দিল ইভান। অস্থিরতা কমানোর চেষ্টা করল বড় করে শ্বাস নিয়ে। ‘নার্ভাস হওয়ার কিছু নাই।’ মনে মনে বলল ইভান। রাস্তার দোকানগুলোর দিকে নজর দিয়ে মনযোগ অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করল ও। দোকানের সাইনবোর্ডগুলো পড়তে লাগল একটার পর একটা। কাজটা নতুন নয় ওর জন্য। কোথাও যাওয়ার সময় সাইনবোর্ডের লেখাগুলো পড়া ওর পুরোনো অভ্যাস।

সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অজান্তেই ভেসে উঠল চোখের সামনে। বাইকে এসে কারা আক্রমণ করতে চাইল ওদের ওপর? জিকো ছাড়া আর কোনো শত্রু নেই ইভানের। জিকো ওদের ফলোও করেছিল। ও ছাড়া এই কাজ কে করাবে? ‘কী শয়তান! পা ভেঙে নিজে বাইক চালাতে পারছে না, অন্যদের দিয়ে পাঠিয়েছে।’ ভাবল ইভান। আবার ফোন বের করে রাতুলকে কল করল ও।

‘হ্যালো, রাতুল।’

‘কিরে…’

‘আজকে জি ব্লকে গিয়েছিলাম আমি রুশা।’

‘সেই মামা, সেই!’

‘আরে শোন, ফাজলামি না। দুটি বাইকে চারজন আমাদের অ্যাটাক করতে চেয়েছিল। ফোন নিতে চেয়েছে।’

‘বলিস কী! কারা?’

‘চিনি না তো। তোর পোলাপানদের একটু জিজ্ঞেস করিস তো।’

‘আচ্ছা, আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। তুই প্যারা নিস না।’

‘ওকে।’

আরও পড়ুন

একটু পর থানার ঠিক সামনেই ইভানকে নামিয়ে দিল রিকশা। ভাড়া মিটিয়ে ও দেখল, মেইন গেটের পাশেই পুলিশের একটা টহল গাড়ি। গাড়িতে একজনকে হাতকড়া পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। লোকটাকে অবশ্য খুব একটা চিন্তিত বলে মনে হলো না ওর। দেখে মনে হচ্ছে, লোকটা আরাম করে মেট্রোতে বসে আছে। নির্ধারিত স্টেশনে এলেই নেমে যাবে। তবে গাড়ির সামনে মনে হয় তার পরিচিত মানুষেরা ভিড় করেছে। একজন পুলিশ সদস্য কথা বলছেন তাদের সঙ্গে। আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পা চালাল ইভান, ঢুকে গেল থানার ভেতরে।

এই থানায় আগে একবার এসেছিল ও। ব্যাগে ছুরি পাওয়ার পর হেডস্যারের রুম থেকে থানায় নিয়ে এসেছিল পুলিশ। পুরো ঘটনাটা ইভানের চোখের সামনে ভেসে উঠল আবার। ওসির রুম কোন দিকে, জানে ও। তারপরও ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞেস করল নিশ্চিত হওয়ার জন্য। হাতের ইশারায় তিনি দেখিয়ে দিলেন কোন দিকে যেতে হবে। রাত হয়ে গেছে, তবু থানায় অনেক মানুষের আনাগোনা। ব্যস্ত ভঙ্গিতে ছোটাছুটি করছে মানুষ। তার মধ্য দিয়েই করিডর ধরে হেঁটে যাচ্ছে ইভান। হঠাৎ পেছন থেকে একজন বললেন,

‘এই ছেলে, এখানে কী? তুমি কই যাও?’

থমকে দাঁড়াল ইভান। ওর দিকেই এগিয়ে এসেছেন একজন পুলিশ সদস্য। আবার বললেন,

‘কী? এখানে কী চাও?’

‘ওসি স্যার দেখা করতে বলেছেন।’ বলল ইভান। ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালেন পুলিশ সদস্য।

‘আসো, আমার সাথে আসো।’ বলেই হাঁটা দিলেন তিনি। মেঝেতে গটগট শব্দ তুলল তাঁর বুটজোড়া। দ্রুত পুলিশ সদস্যের পেছন পেছন হাঁটল ইভান। ওসির রুমের দরজার সামনে গিয়েই খটাশ করে স্যালুট ঠুকলেন তিনি। তাঁর পাশে এসে দাঁড়াল ইভান। নিজের চেয়ারে বসে ফোনে কথা বলছেন ওসি। ইভানকে দেখে ভেতরে যেতে বললেন হাতের ইশারায়। টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ইভান। টেবিলে রাখা ওয়াকিটকি থেকে একটু পরপর অস্পষ্টভাবে নানা রকম কথা ভেসে আসছে, ওভার আর আউট ছাড়া কোনো শব্দই ইভানের মাথায় ঢুকল না। হঠাৎ বেজে উঠল ইভানের ফোন। রাতুল কল করেছে। দ্রুত ওর কল কেটে সাইলেন্ট করে দিল ইভান। এখন কথা বলার সুযোগ নেই। এদিক-ওদিক তাকিয়ে সময় কাটানোর চেষ্টা করল ও। কথা শেষ করে ফোনটা টেবিলের ওপর রাখলেন ওসি মোস্তাফিজ। ছোট একটা শ্বাস ফেলে ইভানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বসো।’ চেয়ার টেনে বসল ইভান। ওসি বললেন,

‘কী খাবে, বলো। পাশেই পুলিশ ক্যানটিন আছে। ভালো মোগলাই পাওয়া যায়। খাবে?’

‘রুশার।’ ইভানের কথা শুনে হতাশ হয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন ওসি। ‘আঙ্কেল, আপনি শুনলে হয়তো রাগ করবেন। কিন্তু রুশার কোনো দোষ নেই। ও অনেক কিছু বুঝতে পারে।’

‘জি না।’ যদিও বাসায় ফেরার পর আর কিছু খাওয়ার সুযোগ পায়নি ইভান। প্রচণ্ড ক্ষিদে পেয়েছে ওর। কিন্তু তবু না-ই বেরোল ওর মুখ দিয়ে। টেবিলের ওপর ছোট একটা সুইচ চাপলেন ওসি। টিংটং করে বেজে উঠল কলিং বেল। কয়েক সেকেন্ড পরই একজন এসে সশব্দ স্যালুট ঠুকল দরজার সামনে, ‘স্যার!’

‘একটা মোগলাই পাঠাতে বলো। ডবল ডিম। আর…’ একটু থেমে ইভানের দিকে তাকালেন ওসি। জিজ্ঞেস করলেন

‘কোল্ডড্রিঙ্কস?’

এবার আর না করতে পারল না ইভান। মাথা নাড়ল।

‘একটা কোল্ডড্রিঙ্কস।’ বললেন ওসি।

‘জি স্যার।’ বলে স্যালুট ঠুকে চলে গেল লোকটা। এবার সরাসরি ইভানের চোখের দিকে তাকালেন ওসি। অস্বস্তিবোধ করল ইভান। টের পেল, একটু ঘেমে উঠছে কপালের দুপাশ।

‘বলো ইভান, কেমন আছ?’ গম্ভীর গলায় বললেন ওসি।

‘জি স্যার। ভালো।’

‘আরে, কী আশ্চর্য!। স্যার স্যার করছ কেন? তুমি রুশার বন্ধু না? আঙ্কেল ডাকবে আমাকে।’

‘জি…আঙ্কেল।’

‘গুড। এবার বলো তো বাবা, তোমরা নুরুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলে কেন?’ আচমকা এই প্রশ্নে ভড়কে গেল ইভান। কী বলবে, বুঝতে পারল না। কোনোমতে বলল,

‘এমনিই গিয়েছিলাম…আঙ্কেল।’

‘ইভান!’ গলার স্বরে বদলে গেল ওসির। ‘ইমার্জেন্সি না হলে তোমাকে এই রাতের বেলায় আমি থানায় ডেকে আনতাম না। বুঝতে পেরেছ?’

‘জি।’

‘কেন গিয়েছিলে বলো। আমি খবর পেয়েছি, কদিন ধরেই তোমরা ওদিকে ঘুরঘুর করছ। ব্যাপারটা কী?’

আরও পড়ুন

খট করে টেবিলে একটা প্লেট ভর্তি মোগলাই আর কোল্ডড্রিঙ্কসের বোতল রেখে গেল একজন কর্মচারী। চমকে উঠেও নিজেকে সামলে নিল ইভান।

‘আঙ্কেল আসলে…’

‘ওয়েট। আগে খেয়ে নাও। শুরু করো।’ বলে কাঁটাচামচ দিয়ে মোগলাই পরোটার একটুকরো তুলে নিলেন ওসি মোস্তাফিজ। মুখে দিয়েই ইভানকে বললেন, ‘কী হলো? নাও। হেজিটেড কোরো না।’

দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে খেতে শুরু করল ইভান। এক ফাঁকে চুমুক দিল কোল্ডড্রিঙ্কসে। নার্ভাসনেস কিছুটা ওর। নিজেই জিজ্ঞেস করল,

‘আঙ্কেল, একটা কথা ছিল।’

‘বলো।’ খেতে খেতে বললেন ওসি।

‘রুশা ঠিক আছে?’

‘হ্যাঁ। ও আছে ঠিকঠাক। বাসায় আছে। তুমি খেতে খেতে বলতে পারো। দ্রুত হবে তাহলে।’

‘জি…আঙ্কেল, আমরা আসলে নুরুল ইসলাম আঙ্কেলের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।’

‘তোমরা ওনাকে চিনতে আগে থেকে?’

‘জি না।’

‘তাহলে?’

‘আমরা ভেবেছিলাম, ওনার সঙ্গে দেখা করে যদি কোনো তথ্য বের করতে পারি, তাহলে আপনার কাজে হেল্প হবে।’

‘তোমরা কি পুলিশ? নাকি ডিবি? কে বলেছে তোমাদের হেল্প আমাদের দরকার?’ ধমকে উঠলেন ওসি। কেঁপে উঠল ইভান। ‘কত বড় বিপদ ঘটতে পারত কোনো আইডিয়া আছে তোমাদের? তুমি জানো, তোমাদের পেছনে লোকজন নজর রাখছিল?’

‘জি। জানি।’

‘মানে? কীভাবে জানো?’

‘আমাদের ফলো করছিল জিকো। যে আমার ব্যাগে ছুরি রেখেছিল। আমার ধারণা, সন্ধ্যায় ওর লোকজনই আমাদের অ্যাটাক করতে চেয়েছিল।’

‘নুরুল ইসলামের মার্ডারারকে ধরার জন্য আমরা রাতদিন কাজ করছি। ওই বাসার আশপাশে আমাদের লোক আছে। তোমাদের কারণে পুরো প্ল্যানটা নষ্ট হয়ে যেতে পারত। বোঝো সেটা?’

‘আঙ্কেল…আমরা আসলে এত কিছু ভেবে কাজটা করিনি।’

‘না ভেবে হুট করে ওখানে চলে গেলে? বাসা চিনলে কীভাবে?

‘আমরা ওখানকার একটা চায়ের দোকানদারের কাছ থেকে ঠিকানা ম্যানেজ করেছি।’

‘ডিটেইল বলো। এই কেসের সঙ্গে তোমরা জড়ালে কীভাবে?’

‘আঙ্কেল, যখন আমি জানলাম আমার ব্যাগে যে ছুরিটা পাওয়া গেছে, সেটা দিয়েই নুরুল ইসলামকে খুন করা হয়েছে, তখন লোকটা কে, কী করে, সে সম্পর্কে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম। পরে রুশা বলল, আমরা আরেকটু এগিয়ে দেখি। মানে কাইন্ড অব গোয়েন্দাগিরি যাকে বলে আরকি। তো সে জন্য আমি আর রুশা ওই বাসায় গিয়েছিলাম। আর কিছু না।’

‘আইডিয়াটা কার?’ চুপ করে রইল ইভান। ‘বলো, কার মাথা থেকে বেরিয়েছে এই আইডিয়া?’

‘রুশার।’ ইভানের কথা শুনে হতাশ হয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন ওসি। ‘আঙ্কেল, আপনি শুনলে হয়তো রাগ করবেন। কিন্তু রুশার কোনো দোষ নেই। ও অনেক কিছু বুঝতে পারে।’

‘মানে?’

‘ও জানে, খুনটা কে করেছে।’

আরও পড়ুন

‘হোয়াট? কী বলো উল্টাপাল্টা। ও কীভাবে জানবে? ‘জি, আঙ্কেল। ও জানে। মানে আজ যখন ওই বাসা থেকে বের হলাম, রুশা বলল ও জানে।’

‘খুন কে করেছে?’

‘রুশার ধারণা, খুনটা করেছে নুরুল ইসলামের বিজনেস পার্টনার ফরিদ।’

‘তোমাদের কাছে কোনো প্রমাণ আছে?’

‘জি না।’

‘আন্দাজে একটা লোককে খুনি বানিয়ে দিলে? কিসের ভিত্তিতে? তোমরা কি ভাবছ, তোমরা একেকজন শার্লক হোমস? ফেলুদা? এটা কি ডিটেকটিভ বই পেয়েছ নাকি তোমরা?’ চুপ করে রইল ইভান। রেগে গেলেন ওসি মোস্তাফিজ। একটু পর সামলে নিয়ে বললেন,

‘ইভান, তুমি রুশাকে কতটুকু বিশ্বাস করো?’

‘আঙ্কেল, রুশা আমার বন্ধু। বন্ধুকে বিশ্বাস করব না? পুরোপুরি বিশ্বাস করি।’

‘রুশা কি ওর ব্যাপারে তোমাকে কিছু বলেনি?’

‘কোন ব্যাপার?’

‘কনডাক্ট ডিজঅর্ডার রোগটার সঙ্গে তুমি পরিচিত?’

‘জি না।’

‘আমি পরিচিত। খুব ভালোভাবে পরিচিত। কারণ, আমার মেয়ে রুশার এই রোগ আছে।’ হাঁ করে তাকিয়ে রইল ইভান। ‘এই রোগের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। হতাশা, হুটহাট আক্রমণাত্ক আচরণ করা, কারণে ও অকারণে মিথ্যা বলাসহ আরও অনেক। সব তোমাকে এখন বুঝিয়ে বলার সময় নেই। জেনারেলি, রুশা হতাশ থাকে। ওর আচরণ মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায়। আর ও এমনভাবে মিথ্যা বলে যে কেউ ধরতেই পারে না কোনটা মিথ্যা আর কোনটা সত্যি।’

‘মাথা খারাপ নাকি? আমি একটা কাজে বাইরে এসেছি। এখনই বাসায় যেতে হবে। নইলে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেবে ফুফু।’

একদম স্তব্ধ হয়ে গেল ইভান। ওর মনে হলো, কানের কাছে কিছু একটা দপদপ করছে। রুশার সঙ্গে পরিচয়ের দিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এলোমেলোভাবে ঘুরতে লাগল মাথায়। বহুবার রুশার কথাগুলো খটকা লেগেছে ইভানের। অনেকবারই মনে হয়েছে, মিথ্যা বলছে রুশা। কিন্তু বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ হয়নি কখনো। ওসি মোস্তাফিজ বললেন,

‘ওর মায়ের সঙ্গে আমার সেপারেশন হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। ব্যাপারটা ওকে খুবই হার্ট করেছে। ট্রমাটাইজ হয়ে গিয়েছিল ও। মানতে পারেনি। এখনো পারে না। খুব রাগ আমাদের ওপর। সমস্যাটা তখন থেকেই আস্তে আস্তে দেখা দিয়েছে। ও একটা কল্পনার জগতে থাকে। চিকিৎসা চলছে অবশ্য। ওকে সাইকোলজিস্টের কাছে থেরাপি নিতে যেতে হয় রেগুলার। কিন্তু ও সেটা কন্টিনিউ করে না। ওর মনে হয়, আমরা জোর করে এসব করাচ্ছি। আর এই থানায় এসেই নানা কেসে এমনভাবে আটকে গেলাম যে ওকে টাইমই দিতে পারিনি। কিন্তু ওর কথামতো কাজ করতে গিয়ে তোমরা দুজনই আজ বিপদে পড়তে পারতে।’

‘আঙ্কেল, রুশার এই অসুখ ভালো হবে না?’

‘অবশ্যই ভালো হবে। তবে সময় লাগবে।’

‘এখন তাহলে কী করব?’

‘রুশাকে কিছু বলার দরকার নেই। আমার সঙ্গে যে তোমার কথা হয়েছে, কিংবা তুমি যে ওর সমস্যাটার কথা জানো, এগুলো কিচ্ছু বলার দরকার নেই। ওকে সময দাও, একটা ফ্রেন্ডশিপ যেভাবে আগায়, এগোতে থাকো। স্পেস দাও। তোমার যারা বন্ধু আছে, তাদের সঙ্গে ওকে পরিচয় করিয়ে দাও। সোশ্যালি ওকে ইনভলভ রাখা দরকার। যত দূর তোমরা পারো। জোর কোরো না।’

‘জি।’

‘তুমি এখন বাসায় যাও। আর এসব কেসটেস নিয়ে তোমাদের একদম ভাবতে হবে না। পড়ালেখা নিয়ে ভাবো। সামনে পরীক্ষা না?’

‘জি।’

‘রাত হয়ে গেছে। তোমার ফুফা-ফুফু চিন্তা করবেন। যাও।’ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন ওসি। দাঁড়াল ইভানও। এগিয়ে এসে ইভানের কাঁধে হাত রাখলেন রুশার বাবা। বললেন, ‘তোমরা আমাকে হেল্প করতে চাও, তাই তো? রুশাকে দেখে রাখো। এটাই হবে সবচেয়ে বড় হেল্প।’

‘জি আঙ্কেল, আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি ওকে নিয়ে টেনশন করবেন না। ও ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে।’

‘থ্যাঙ্ক ইউ।’

আরও পড়ুন

তীব্র মন খারাপ নিয়ে থানা থেকে বেরুল ইভান। তার মানে, শুরু থেকে রুশা যেসব বলেছে, কিডন্যাপ করা, বিড়ালের কথা বোঝা—এগুলো সবই মিথ্যা। রুশার জন্য খারাপ লাগছে। মেয়েটা এ রকম একটা অসুখ নিয়ে ঘুরছে, অথচ ও কিছুই টের পেল না? নিজের প্রতি একটা অপরাধবোধ জেগে উঠল ওর। ফোন বের করল ইভান। বেশ কয়েকবার কল করেছে রাতুল। কল ব্যাক করল ওকে। ওপাশ থেকে রাতুল বলল,

‘কি রে, কই তুই?’

‘এই তো, বাসার কাছেই।’

‘তোকে কল দিয়েই যাচ্ছি একের পর এক, ধরছিস না…যা-ই হোক, একটা অটো নিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে চিড়িয়াখানার এদিকে আয়।’

‘মানে কী? কেন?’

‘আরে আয়। তোকে যেখানে র‍্যাগ দিয়েছিলাম, ওইখানে চলে আয়। না চিনলে ফোন দিস।’

‘মাথা খারাপ নাকি? আমি একটা কাজে বাইরে এসেছি। এখনই বাসায় যেতে হবে। নইলে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেবে ফুফু।’

‘তোমাকে যে আসতেই হবে বন্ধু। নইলে আমরা ঠ্যাং ভেঙে দেব।’

‘কী বলছিস উল্টপাল্টা?’

‘ইয়েস। তোমার চিরশত্রু জিকোকে আমরা আটকে রেখেছি। চলে আসো, কুইক।’

‘মানে কী! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না রাতুল। আবার কোন নাটক করছিস?’

‘আরে তুই আয় না। এসেই দেখ কোন নাটক। দ্রুত আয়। ব্যাটা স্বীকার করেছে তোদের ফলো করার কথা। কিন্তু আজকের ঘটনা স্বীকার করে নাই এখনো। মালাইচাকির মোড়ক উন্মোচন হবে আজকে, তখন ঠিকই স্বীকার করবে। তাড়াতাড়ি আয়।’ কল কেটে দিল রাতুল। রাস্তার মাথায় কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ইভান। ১০টা বাজতে চলল প্রায়। এত রাতে কী বলে ম্যানেজ করবে ফুফুকে? বড় করে শ্বাস নিয়ে ফুফুর নম্বরে কল করল ইভান। রিং হচ্ছে। ইশারায় এটা ব্যাটারি রিকশাকে থামতে বলল ইভান। রিকশা থামল। ফোন কানে রেখেই রিকশায় উঠে ইভান বলল, ‘মামা, চলেন, চিড়িয়াখানার মোড়।’

চলবে...

আরও পড়ুন
দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি
প্রচ্ছদ: আরাফাত করিম

আদনান মুকিতের লেখা 'দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি' ২০২৩ সালের জানুয়ারি সংখ্যা থেকে কিশোর আলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথমা প্রকাশনী থেকে কিশোর উপন্যাসটি পরিমার্জিত হয়ে বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি কিনতে পাওয়া যাবে এই লিংক থেকে: 'দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি' । লিংকে ক্লিক করে বইটি অর্ডার করতে পারো অথবা ফোন করো এই নম্বরে: 01730000619

আরও পড়ুন